ঢাকা ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম – দূর আকাশের দূরবীন

আজ যিনি নেই তিনি একদিন ছিলেন আমাদেরই মাঝে, ছুটে এসেছিলেন এই নদী বিধৌত কাদামাটি আর সাগর বিধৌত নোনা জলের বাংলায় শুধু মাত্র আমাদেরকে ভালবেসে, নিজেকে উজাড় করে দেবার জন্য। কিন্তু হায় আমরা তো দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি না। আজ তিনি নেই – আমরা মহা উৎসাহে তাঁর সাফল্য, কর্ম, কীর্তি আর প্রকাশনা নিয়ে কতই না সিম্পোজিয়াম, আলোচনা, বক্তৃতা আর পত্রিকার কাভার স্টোরি করতে ব্যস্ত, মৃত্যুর অষ্টম বর্ষ পেরিয়ে এসেও আমরা কি প্রকৃত মানুষটিকে সর্বসাধারণের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি? আমরা সবসময় সাফল্যের গৌরবে ভাগ বসাতে পারঙ্গম, কিন্তু দুর্গম যাত্রার সারথি হতে বড়ই অনিচ্ছুক। কতো সহজে পাদ প্রদীপের আলোতে পৌঁছে যাওয়া যায় কোন কিছু না করেও – ফেমাস আর সেলিব্রেটি হবার অসুস্থ মনস্তাত্ত্বিকতা আমাদের ঘাড়ে আছর করেছে। সাফল্যর পথ কি এতই শর্টকাট?

বহুকাল আগে কোনো এক উদাস ফাগুন মাসে যে শিশুর জন্ম কোনো জ্যোতিষই কি সেদিন বুঝতে পেরেছিলো এই পৃথিবীতে এসে গেছে এমন এক শিশু যে কিনা জ্যোতিষ না হয়েও বিশ্বব্রহ্মান্ডের কপাল লিখন লিখে যাবে একদিন। তাবৎ বিশ্ব হা হয়ে শুনবে সেই মহাকাব্যিক চিন্তা। বাস্তবে এই সব কিছুই ঘটেছে এবং ঘটেছে এর চাইতেও বেশি কিছু। অন্য দশটি শিশুর মত সেও ছিল দুরন্ত-অস্থির, লেখাপড়ায় ছিল না একটুও মনোযোগ। ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকি আর বুড়ীর কোল ঘেঁষে বেড়ে ওঠেন শিশু জামাল। আর হয়তো তাই নদীর মতই কখনো শান্ত কখনো উত্তাল, কখনো দুপার ছাপানো বর্ষার ব্যাপকতা বা কখনো নদীর গুরুগম্ভীর গভীরতা তাঁর শিশু মানস্পটে সুগভীরভাবে প্রোথিত হয়েছিলো যা কিনা জীবনের অন্য ভাগে ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে। বাবা মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম আর মা রাহাত আরা বেগমের কোল জুড়ে জন্ম নেন এক ফুটফুটে গৌরকান্তি বর্ণের শিশু জামাল। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগি-লাগি করছে – ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। বাবা চাকরি সূত্রে ঝিনাইদহে সাব জজ (মুন্সেফ) ছিলেন। মা ছিলেন একজন সাহিত্য অনুরাগী লেখক, গানও গাইতেন ভালো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকটি উর্দুতে অনুবাদ করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন রাহাত আরা। তাদের বাসায় যাতায়াতও ছিল অনেক উঁচু দরের মানুষের। তাদের কলকাতার বাসায় কবি কাজী নজরুল ইসলামও যাতায়াত করতেন। কবির নামের সাথে মিল রেখেই তার বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন ‘জামাল নজরুল ইসলাম’। জন্মস্থান ঝিনাইদহ হলেও তাঁর শিকড়ের ঠিকানা চট্টগ্রাম। বংশগত দিক থেকে ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান, ‘লালসালু’ উপন্যাসের স্রষ্টা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর ফুপাতো ভাই। জামাল নজরুল ইসলামের জীবনে তাঁর মা ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। শিশু জামাল নজরুল ইসলামের বয়স যখন মাত্র ১০, মা মারা যান (১৯৪৯ সালে)। শিশু বয়সে মাকে হারালেও সারা জীবন কখনো ভোলেননি মায়ের স্মৃতি।

বাবার বদলির চাকরি, তাঁর বয়স যখন ১ বছর বাবা বদলি হলেন কলকাতায়। কলকাতায় স্কুলজীবন শুরু হয় শিশু বিদ্যাপীঠে; কেটে যায় চারটি বছর। ঘোরাঘুরি করতে খুব ভালো লাগত তাঁর। পড়াশোনা একদমই করতে ইচ্ছা হতো না। স্কুলেও যেতে চাইতেন না। কলকাতায় ৪র্থ শ্রেণির পাঠ শেষ করে, চট্টগ্রামে এসে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। মেধা পরীক্ষায় তাঁর কৃতিত্ব দেখে কর্তৃপক্ষ ডাবল প্রমোশন দিয়ে তাঁকে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পড়ালেখা করলেও এখানে পড়ার সময়ই গণিতটা একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করে তাঁর। এ সময়ে তিনি নিজে নিজেই প্রচুর জ্যামিতি সমস্যার সমাধান করতে শুরু করেন। এরপরে চলে যেতে হয় পশ্চিম পাকিস্তানের মারিতে, ভর্তি হন পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে। সেসময় ওখানে মেট্রিকুলেশন ছিল না। ও লেভেল ছিল, ওটা পাস করে এ লেভেল করেন। সেসময়ে তিনি নিজে নিজে বই পড়ে হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পরীক্ষার গণিতের সমস্যাগুলো সমাধান করেছেন। হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পরীক্ষায়।

ম্যাথমেটিক্স বিষয়টি পড়েছিলেন কেবল তিনি একাই। ওটা ছিল অ্যাডভান্স পর্যায়ের ম্যাথ। পাকিস্তানের লরেন্স কলেজ থেকে সিনিওর কেমব্রিজ পাশ করেন। এরপর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি অনার্স করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি কেমব্রিজে পড়তে যান। বিশ্বখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ থেকে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫৯ সালে। ১৯৬০ সালে সম্পন্ন করেন মাস্টার্স। এখান থেকেই গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৪ সালে। আবার কেমব্রিজ থেকেই ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইতিমধ্যে ১৯৬০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি কলকাতার মেয়ে সুরাইয়া ইসলামের (পরবর্তীতে ইতিহাসে ডক্টরেট করেন) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

আমাদের কাছে বিজ্ঞানচর্চা যেন অনেকটা অন্ধের হাতি দর্শনের মতই ব্যাপার – অনেকে যখন এমনটাই ভাবেন তখন ড. জামাল নজরুল ইসলাম হতে পারেন সমুচিত জবাব। আসলে বিজ্ঞানচর্চা এই উপমহাদেশে যে কতো প্রাচীন তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। এই ‘না’ আমাদের জাতীয় জীবনের অতি গভীরে শেকড় গেড়ে বসে আছে। বিজ্ঞানের যাত্রা যে এই না থেকেই। তাবৎ ‘না’-কে হ্যাঁ করার জন্য যে বিজ্ঞান নিরন্তর কাজ করে চলে, সেটা যে কোনো অলীক-অধরা বিষয় নয়, এ সত্যটা আমাদের কমই মগজে ঢোকে। সঙ্গীত ভালবাসে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে, আর বাঙ্গালি তো শিল্পরসিক। তাহলে বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞান তো তাবৎ শিল্পের এক বড় মেলবন্ধন। বিশ্বে বিজ্ঞানক্ষেত্রে প্রতিটি জাতিরই কিছু না কিছু অবদান আছে, সংখ্যাতাত্ত্বিক দিক থেকে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের চাইতে পিছিয়ে পড়ছি। এখন অগনতি ছাত্রছাত্রী এই দেশে বিজ্ঞানে পড়ে কিন্তু বিজ্ঞানী হয়ে ওঠে না। বিশ্ব ইতিহাস বলে বিজ্ঞান পড়ার চেয়ে অধিক চর্চার বিষয়। তবে অতি অবশ্যই চর্চার জন্য চাই অতি গভীর জ্ঞান। বিজ্ঞান মানেই মোটা মোটা বই আর বিশাল লম্বা অন্তহীন গণিতের সমস্যা – হয়তো হালকা ভাবে দেখলে এমনটিই মনে হবে। আসলে এগুলো হলো বিজ্ঞানের শেষের অংশ যেটি আমরা দেখতে পাই, কিন্তু যেটি আমরা দেখতে পাই না সেটি হল শুরু। শুরুটা শুরু হয় একটা চিন্তা দিয়ে যেটি না যায় দেখা, না যায় বোঝা। আর এই কারণেই পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীদেরই আমরা পাগল ভাবি আর সব শেষে যখন এই পাগলদের চিন্তাটি আমাদের সামনে মূর্ত হয়ে উঠে, এই পাগলরাই তখন হয়ে ওঠেন আমাদের মহানায়ক।

বিগত বহু শতাব্দী ধরেই অনেক বঙ্গসন্তান বিশ্ব বিজ্ঞানে দাপটের সাথে পা ফেলেছেন। আশা রাখি ভবিষ্যতে আরও বঙ্গসন্তান দাপটের সাথে নিজ অস্তিত্বের জানান দেবেন। দুঃখ বোধটা এখানেই, যাঁর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখে নিতে পারতাম, তাঁকে কাছে পেয়েও কিছু নিতে পারিনি। তিনি এসেছিলেন বুক উজাড় করে দিতে, কিন্তু আমরা এই মহাপ্রাণকে ঠিকভাবে চিনতেই পারলাম না।

ড. জামাল নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবনের ওপর এতটা আলোকপাত করার কিছু উদ্দেশ্য আছে। জ্ঞানী হতে হলে পড়তে হবে। কতটুকু ? সীমানা বলা সম্ভব নয়। আর জ্ঞানের জগতে অবদান রাখতে হলে সারা জীবনটাই যে লেখাপড়া করে কাটাতে হয়, এটা বোঝাতে ড. জামাল নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবনকে উদাহরণ হিসাবে টানা। জামাল নজরুল ইসলাম বিলেতের ও আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে অধ্যাপনা ও গবেষণা করেছেন। এমনটি হয়তো অনেকেই করেন, কিন্তু উনি অনেকের ভেতর এক বললে ভুল হবে, গেল শতাব্দীর অন্যতম মহাকাশ বিজ্ঞানী। কেননা বিগত শতাব্দীর যত মহারথী মহাকাশ বিজ্ঞানী এই পৃথিবীতে ব্যাপক পরিচিত, তাঁরা প্রায় প্রতেকেই কোনো না কোনো ভাবে উনার সহকর্মী কিংবা সহ-গবেষক। ড. জামাল নজরুল ইসলামের জীবনটা অনেকটা জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে এক সরল রেখায় মিলে গেছে। শুধুমাত্র বাঙ্গালি বিজ্ঞানী হবার জন্য যেমন জগদীশচন্দ্র বসু বেতার তরঙ্গ আবিষ্কারের পরেও কৃতিত্ব গেছে মারকনির হাতে, ঠিক তেমনি আমরা উনাকে চিনতে না পারায় উনিও থেকে গেছেন প্রচারের অন্তরালে। তবে সূর্যকে ঢেকে রাখে সাধ্য কার? বিগত শতাব্দী থেকে মহাকাশ গবেষণা আছে সবচেয়ে সামনের সারিতে এবং এ খাতে বরাদ্দও বিপুল। কারণ একটাই এই পৃথিবীতে আমাদের ভবিষ্যৎ অতি অনিশ্চিত। প্রয়োজন নতুন গ্রহের সন্ধান ও নতুন বাসস্থান যেখানে মানুষ আবারও তার সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারবে। এই যাত্রায় পুরোধা বিজ্ঞানী যাঁরা – যেমন ভারতের বিখ্যাত জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী জয়ন্ত নারলিকা, স্টিফেন হকিং (২ বছরের জুনিওর) প্রমুখ – তাঁর সহপাঠী ছিলেন। ফ্রেডরিক হয়েল, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ব্রায়ান জোসেফসন, স্টিফেন হকিং, জিম মারলিস, জন টেলর, ডাইসন, প্রফেসর আব্দুস সালাম, রিচার্ড ফাইনমেন, হুজিহিরো আরাকি, স্যার মাইকেল আটিয়া, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রমুখ ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

ড. জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন বহুমাত্রিক জ্ঞানের অধিকারী। তবে মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত তিনি। মহাবিশ্বের পরিণতি কী হতে পারে বা কী হবে, এই জটিল বিষয়টা নিয়ে লেখা তাঁর ‘দ্য আল্টিমেট ফেট অব দি ইউনিভার্স’ (মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি) বইটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশ হওয়ার পর বিজ্ঞানী মহলে বেশ হইচই পড়ে যায়। বইটি পরে জাপানি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ ও যুগোস্লাভ ভাষায় প্রকাশিত হয়। ১৯৮৪ সালে তিনি W B Bonnor – এর সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’ এবং ১৯৮৫ সালে রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি’। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস তাঁর তিনটি বই প্রকাশ করেছে। তিনটি বইই কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড, প্রিন্সটন, হার্ভার্ডসহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। হকিং বলেছিলেন, ‘জেএন ইসলাম আমার রুমমেট, বন্ধু এবং আমরা ছিলাম পরস্পর পরস্পরের শিক্ষক।’ ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হকিং যেসব বিজ্ঞানীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন, তন্মধ্যে জেএন ইসলাম ছিলেন অন্যতম। তবে এসব বইয়ের তুলনায় তাঁর বাংলায় লেখা বইগুলোকে কোনো অংশে কম মনে করেন না তিনি। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘কৃষ্ণ বিবর’ (ব্ল্যাকহোল) এবং রাহাত-সিরাজ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’ ও ‘শিল্পসাহিত্য ও সমাজ’ নামক বইগুলি তাঁর লেখা অন্যান্য বইয়ের মধ্যে অন্যতম। শেষোক্ত বই দুটি মূলত সংকলন। এ ছাড়াও তাঁর দুটি জনপ্রিয় আর্টিকেল আছে। একটি হলো ‘দ্য আল্টিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ’। পরে এটির স্প্যানিশ সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে। আরেকটি হলো ‘দ্য ফার ফিউচার অব দ্য ইউনিভার্স, এনভেডর’। এই আর্টিকেলটি জার্মান, ডাচ ও ইতালিয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাঁর লেখা গবেষণাপত্রের সংখ্যা প্রায় ৬০। ড. নজরুলের তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত প্রায় দশজন পিএইচডি ও প্রায় আটজন শিক্ষার্থী এম.ফিল. ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটির এবং কেমব্রিজের শিক্ষার্থী রয়েছেন দুজন। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল এস্ট্রোনমির স্টাফ মেম্বার ছিলেন। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে আরম্ভ করে আমেরিকার প্রিন্সটন ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিসহ (যেখানে আইনস্টাইন তাঁর শেষ বিশ বছর কাটিয়েছিলেন) অনেক খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক, ভিজিটিং অ্যাসোসিয়েট বা মেম্বার হিসেবে কাজ করেছেন। সারা বিশ্বে বিজ্ঞানী মহলে জেএন ইসলাম জিনিয়াস ইসলাম নামেও পরিচিত ছিলেন। স্টিফেন হকিং মহাবিশ্ব নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন, ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামে বই লিখে দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাতও হয়েছেন। তবে জামাল নজরুল ইসলাম মহাবিশ্বের উচ্চমার্গীয় বিষয় নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন তারও আগে। হকিংয়ের প্রথম বই A Brief History of Time প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে এবং জামাল নজরুল ইসলামের প্রথম বই The Ultimate Fate of The Universe প্রকাশিত ১৯৮৩ সালে। সারাবিশ্ব দাপিয়েও শুধু নিজের দেশ আর মানুষের কথা ভেবে বার বার ফিরে আসার চেষ্টা করেছেন নিজ দেশের নিজ জেলার ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে’। হায়, এত বড় মানুষটিকে ১৯৮১ সালে গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে মাত্র ৩০০০ টাকা বেতন দিতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কিছুতেই রাজি হয়নি। কেমব্রিজ ভার্সিটির অধ্যাপকের পদ, সোয়া লাখ টাকা বেতন; সম্মানের লেভেলটা বুঝতে পারছেন তো? এই চাকুরি অবলীলায় ছেড়ে দিয়ে এইদেশে চলে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার চাকুরিতে। ভাবতে পারছেন? আপনি কিংবা আমি হলে এই লোভনীয় সুযোগ হাতছাড়া করতে পারতাম? হকিংয়ের বন্ধু আর রুমমেট ‘ড. জামাল নজরুল ইসলাম’ বিশ্বের রথি মহারথিদের দৃষ্টি তাঁর দিকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন একটি চিন্তা আর একটি বই দিয়ে। তাঁর গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই পদার্থবিজ্ঞানের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তাঁর অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ওয়েইনবারগ। তিনি বলেন, ““we are particularly indebted to Jamal Islam, a physicist colleague now living in Bangladesh. For an early draft of his 1977 paper which started us thinking about the remote future” । ভাবনার আকাশে কি সূর্য উঁকি দিচ্ছে ? কোন মাপের মানুষ ছিলেন তিনি? নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম বলেছিলেন, “এশিয়ার মধ্যে আমার পরে যদি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পায়, তবে সে হবে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম।” লক্ষ টাকা আর বিলেতের আয়েশি জীবনের মোহ ছেড়ে যে ব্যক্তিটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৮০০ টাকায় শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন শুধু নাড়ির টানে, তারই সৃষ্টি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের “রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিকাল সায়েন্স” আজ বিশ্বে উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

লন্ডনে অবস্থান কালে ২৫ শে মার্চের মধ্য রাতে পূর্ব পাকিস্তানে চালানো ““Operation Search Light” ও পরবর্তী নৃশংস হত্যাকান্ড তাঁকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। এই মানুষটাই কিন্তু ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছিলেন। চতুর্দশ নদী বেষ্টিত ভূমিতে যে বঙ্গসন্তানের জন্ম একদিন সে এই ছোট্ট দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ বিশাল পৃথিবীর অনেক বিস্তৃত ভূমিতেই শুধু বিচরণ করেনি, পৃথিবীর মাটিতে শক্ত করে পা রেখে চোখ রেখেছেন দূর আকাশের লক্ষ-কোটি তারার পানে। তাঁর দৃষ্টি এতই প্রখর ছিল যে তিনি শুধু আকাশভরা সূর্য তারা দেখেই ক্ষান্ত হন নাই, তিনি তাদের অদূর ভবিষ্যৎও দেখতে পেয়েছিলেন। আর তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এই মহাবিশ্বের অদূর ভবিষ্যতের দূরদ্রষ্টা – তিনিই আমাদের স্যার ড. জামাল নজরুল ইসলাম। আমরা আপনার মূর্খ ছাত্র। আপনার প্রয়াণের অষ্টম বর্ষে (১৬ই মার্চ, ২০১৩) এসে বুঝতে পারছি, আপনি আরও দৃঢ়ভাবে আমাদের মানস্পটে ঠাঁই করে নিয়েছেন। আপনি যেখানেই থাকুন স্রষ্টা আপনাকে ভালো রাখুন। এই প্রার্থনাই করি। আর শুধু যথাসময়ে আপনাকে চিনতে ও বুঝতে না পারার জন্য আমাদের ক্ষমা করে দেবেন স্যার।

লেখক:
আনোয়ারুল আজীম খান অঞ্জন
প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ
ম্যানেজিং পার্টনার : ওয়ার্কম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং

***********************************
বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম

কর্মক্ষেত্র
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কেম্ব্রিজের ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমিতে কাজ করেন। মাঝে ১৯৬৮তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্ট্যাডিতে ভিজিটিং সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স রিসার্চ ফেলো এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মনে সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী ১৯৮৫ সালে জামাল নজরুল ইসলামকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। ১৯৯৪ সালে তিনি ন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মেডেল পান। ১৯৯৮ সালে ইতালির আব্দুস সালাম সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাঁকে মেডাল লেকচার পদক দেওয়া হয়। তিনি ২০০০ সালে কাজী মাহবুবুল্লাহ ও জেবুন্নেছা পদক পান। ২০০১ সালে লাভ করেন একুশে পদক। ২০১১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অবদান রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন
আজীবন সম্মাননা পদক পান।

রচিত গ্রন্থসমূহ
১. দ্য আলটিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স (১৯৮৪)
২. ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪)
৩. রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪)
৪. অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি (১৯৯২)
৫. স্কাই অ্যান টেলিস্কোপ
৬. দা ফার ফিউচার অব দা ইউনিভার্স
৭. কৃষ্ণবিবর
৮. মাতৃভাষা ও বিজ্ঞানচর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ
৯. শিল্পসাহিত্য ও সমাজ

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম – দূর আকাশের দূরবীন

আপডেট সময় ০৫:৫৬:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

আজ যিনি নেই তিনি একদিন ছিলেন আমাদেরই মাঝে, ছুটে এসেছিলেন এই নদী বিধৌত কাদামাটি আর সাগর বিধৌত নোনা জলের বাংলায় শুধু মাত্র আমাদেরকে ভালবেসে, নিজেকে উজাড় করে দেবার জন্য। কিন্তু হায় আমরা তো দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝি না। আজ তিনি নেই – আমরা মহা উৎসাহে তাঁর সাফল্য, কর্ম, কীর্তি আর প্রকাশনা নিয়ে কতই না সিম্পোজিয়াম, আলোচনা, বক্তৃতা আর পত্রিকার কাভার স্টোরি করতে ব্যস্ত, মৃত্যুর অষ্টম বর্ষ পেরিয়ে এসেও আমরা কি প্রকৃত মানুষটিকে সর্বসাধারণের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি? আমরা সবসময় সাফল্যের গৌরবে ভাগ বসাতে পারঙ্গম, কিন্তু দুর্গম যাত্রার সারথি হতে বড়ই অনিচ্ছুক। কতো সহজে পাদ প্রদীপের আলোতে পৌঁছে যাওয়া যায় কোন কিছু না করেও – ফেমাস আর সেলিব্রেটি হবার অসুস্থ মনস্তাত্ত্বিকতা আমাদের ঘাড়ে আছর করেছে। সাফল্যর পথ কি এতই শর্টকাট?

বহুকাল আগে কোনো এক উদাস ফাগুন মাসে যে শিশুর জন্ম কোনো জ্যোতিষই কি সেদিন বুঝতে পেরেছিলো এই পৃথিবীতে এসে গেছে এমন এক শিশু যে কিনা জ্যোতিষ না হয়েও বিশ্বব্রহ্মান্ডের কপাল লিখন লিখে যাবে একদিন। তাবৎ বিশ্ব হা হয়ে শুনবে সেই মহাকাব্যিক চিন্তা। বাস্তবে এই সব কিছুই ঘটেছে এবং ঘটেছে এর চাইতেও বেশি কিছু। অন্য দশটি শিশুর মত সেও ছিল দুরন্ত-অস্থির, লেখাপড়ায় ছিল না একটুও মনোযোগ। ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকি আর বুড়ীর কোল ঘেঁষে বেড়ে ওঠেন শিশু জামাল। আর হয়তো তাই নদীর মতই কখনো শান্ত কখনো উত্তাল, কখনো দুপার ছাপানো বর্ষার ব্যাপকতা বা কখনো নদীর গুরুগম্ভীর গভীরতা তাঁর শিশু মানস্পটে সুগভীরভাবে প্রোথিত হয়েছিলো যা কিনা জীবনের অন্য ভাগে ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে। বাবা মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম আর মা রাহাত আরা বেগমের কোল জুড়ে জন্ম নেন এক ফুটফুটে গৌরকান্তি বর্ণের শিশু জামাল। সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগি-লাগি করছে – ১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। বাবা চাকরি সূত্রে ঝিনাইদহে সাব জজ (মুন্সেফ) ছিলেন। মা ছিলেন একজন সাহিত্য অনুরাগী লেখক, গানও গাইতেন ভালো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকটি উর্দুতে অনুবাদ করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন রাহাত আরা। তাদের বাসায় যাতায়াতও ছিল অনেক উঁচু দরের মানুষের। তাদের কলকাতার বাসায় কবি কাজী নজরুল ইসলামও যাতায়াত করতেন। কবির নামের সাথে মিল রেখেই তার বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন ‘জামাল নজরুল ইসলাম’। জন্মস্থান ঝিনাইদহ হলেও তাঁর শিকড়ের ঠিকানা চট্টগ্রাম। বংশগত দিক থেকে ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান, ‘লালসালু’ উপন্যাসের স্রষ্টা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর ফুপাতো ভাই। জামাল নজরুল ইসলামের জীবনে তাঁর মা ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। শিশু জামাল নজরুল ইসলামের বয়স যখন মাত্র ১০, মা মারা যান (১৯৪৯ সালে)। শিশু বয়সে মাকে হারালেও সারা জীবন কখনো ভোলেননি মায়ের স্মৃতি।

বাবার বদলির চাকরি, তাঁর বয়স যখন ১ বছর বাবা বদলি হলেন কলকাতায়। কলকাতায় স্কুলজীবন শুরু হয় শিশু বিদ্যাপীঠে; কেটে যায় চারটি বছর। ঘোরাঘুরি করতে খুব ভালো লাগত তাঁর। পড়াশোনা একদমই করতে ইচ্ছা হতো না। স্কুলেও যেতে চাইতেন না। কলকাতায় ৪র্থ শ্রেণির পাঠ শেষ করে, চট্টগ্রামে এসে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। মেধা পরীক্ষায় তাঁর কৃতিত্ব দেখে কর্তৃপক্ষ ডাবল প্রমোশন দিয়ে তাঁকে সরাসরি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পড়ালেখা করলেও এখানে পড়ার সময়ই গণিতটা একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করে তাঁর। এ সময়ে তিনি নিজে নিজেই প্রচুর জ্যামিতি সমস্যার সমাধান করতে শুরু করেন। এরপরে চলে যেতে হয় পশ্চিম পাকিস্তানের মারিতে, ভর্তি হন পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে। সেসময় ওখানে মেট্রিকুলেশন ছিল না। ও লেভেল ছিল, ওটা পাস করে এ লেভেল করেন। সেসময়ে তিনি নিজে নিজে বই পড়ে হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পরীক্ষার গণিতের সমস্যাগুলো সমাধান করেছেন। হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পরীক্ষায়।

ম্যাথমেটিক্স বিষয়টি পড়েছিলেন কেবল তিনি একাই। ওটা ছিল অ্যাডভান্স পর্যায়ের ম্যাথ। পাকিস্তানের লরেন্স কলেজ থেকে সিনিওর কেমব্রিজ পাশ করেন। এরপর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি অনার্স করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি কেমব্রিজে পড়তে যান। বিশ্বখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ থেকে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫৯ সালে। ১৯৬০ সালে সম্পন্ন করেন মাস্টার্স। এখান থেকেই গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬৪ সালে। আবার কেমব্রিজ থেকেই ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইতিমধ্যে ১৯৬০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি কলকাতার মেয়ে সুরাইয়া ইসলামের (পরবর্তীতে ইতিহাসে ডক্টরেট করেন) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

আমাদের কাছে বিজ্ঞানচর্চা যেন অনেকটা অন্ধের হাতি দর্শনের মতই ব্যাপার – অনেকে যখন এমনটাই ভাবেন তখন ড. জামাল নজরুল ইসলাম হতে পারেন সমুচিত জবাব। আসলে বিজ্ঞানচর্চা এই উপমহাদেশে যে কতো প্রাচীন তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। এই ‘না’ আমাদের জাতীয় জীবনের অতি গভীরে শেকড় গেড়ে বসে আছে। বিজ্ঞানের যাত্রা যে এই না থেকেই। তাবৎ ‘না’-কে হ্যাঁ করার জন্য যে বিজ্ঞান নিরন্তর কাজ করে চলে, সেটা যে কোনো অলীক-অধরা বিষয় নয়, এ সত্যটা আমাদের কমই মগজে ঢোকে। সঙ্গীত ভালবাসে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে, আর বাঙ্গালি তো শিল্পরসিক। তাহলে বিজ্ঞান কি? বিজ্ঞান তো তাবৎ শিল্পের এক বড় মেলবন্ধন। বিশ্বে বিজ্ঞানক্ষেত্রে প্রতিটি জাতিরই কিছু না কিছু অবদান আছে, সংখ্যাতাত্ত্বিক দিক থেকে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের চাইতে পিছিয়ে পড়ছি। এখন অগনতি ছাত্রছাত্রী এই দেশে বিজ্ঞানে পড়ে কিন্তু বিজ্ঞানী হয়ে ওঠে না। বিশ্ব ইতিহাস বলে বিজ্ঞান পড়ার চেয়ে অধিক চর্চার বিষয়। তবে অতি অবশ্যই চর্চার জন্য চাই অতি গভীর জ্ঞান। বিজ্ঞান মানেই মোটা মোটা বই আর বিশাল লম্বা অন্তহীন গণিতের সমস্যা – হয়তো হালকা ভাবে দেখলে এমনটিই মনে হবে। আসলে এগুলো হলো বিজ্ঞানের শেষের অংশ যেটি আমরা দেখতে পাই, কিন্তু যেটি আমরা দেখতে পাই না সেটি হল শুরু। শুরুটা শুরু হয় একটা চিন্তা দিয়ে যেটি না যায় দেখা, না যায় বোঝা। আর এই কারণেই পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীদেরই আমরা পাগল ভাবি আর সব শেষে যখন এই পাগলদের চিন্তাটি আমাদের সামনে মূর্ত হয়ে উঠে, এই পাগলরাই তখন হয়ে ওঠেন আমাদের মহানায়ক।

বিগত বহু শতাব্দী ধরেই অনেক বঙ্গসন্তান বিশ্ব বিজ্ঞানে দাপটের সাথে পা ফেলেছেন। আশা রাখি ভবিষ্যতে আরও বঙ্গসন্তান দাপটের সাথে নিজ অস্তিত্বের জানান দেবেন। দুঃখ বোধটা এখানেই, যাঁর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখে নিতে পারতাম, তাঁকে কাছে পেয়েও কিছু নিতে পারিনি। তিনি এসেছিলেন বুক উজাড় করে দিতে, কিন্তু আমরা এই মহাপ্রাণকে ঠিকভাবে চিনতেই পারলাম না।

ড. জামাল নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবনের ওপর এতটা আলোকপাত করার কিছু উদ্দেশ্য আছে। জ্ঞানী হতে হলে পড়তে হবে। কতটুকু ? সীমানা বলা সম্ভব নয়। আর জ্ঞানের জগতে অবদান রাখতে হলে সারা জীবনটাই যে লেখাপড়া করে কাটাতে হয়, এটা বোঝাতে ড. জামাল নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবনকে উদাহরণ হিসাবে টানা। জামাল নজরুল ইসলাম বিলেতের ও আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে অধ্যাপনা ও গবেষণা করেছেন। এমনটি হয়তো অনেকেই করেন, কিন্তু উনি অনেকের ভেতর এক বললে ভুল হবে, গেল শতাব্দীর অন্যতম মহাকাশ বিজ্ঞানী। কেননা বিগত শতাব্দীর যত মহারথী মহাকাশ বিজ্ঞানী এই পৃথিবীতে ব্যাপক পরিচিত, তাঁরা প্রায় প্রতেকেই কোনো না কোনো ভাবে উনার সহকর্মী কিংবা সহ-গবেষক। ড. জামাল নজরুল ইসলামের জীবনটা অনেকটা জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে এক সরল রেখায় মিলে গেছে। শুধুমাত্র বাঙ্গালি বিজ্ঞানী হবার জন্য যেমন জগদীশচন্দ্র বসু বেতার তরঙ্গ আবিষ্কারের পরেও কৃতিত্ব গেছে মারকনির হাতে, ঠিক তেমনি আমরা উনাকে চিনতে না পারায় উনিও থেকে গেছেন প্রচারের অন্তরালে। তবে সূর্যকে ঢেকে রাখে সাধ্য কার? বিগত শতাব্দী থেকে মহাকাশ গবেষণা আছে সবচেয়ে সামনের সারিতে এবং এ খাতে বরাদ্দও বিপুল। কারণ একটাই এই পৃথিবীতে আমাদের ভবিষ্যৎ অতি অনিশ্চিত। প্রয়োজন নতুন গ্রহের সন্ধান ও নতুন বাসস্থান যেখানে মানুষ আবারও তার সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারবে। এই যাত্রায় পুরোধা বিজ্ঞানী যাঁরা – যেমন ভারতের বিখ্যাত জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী জয়ন্ত নারলিকা, স্টিফেন হকিং (২ বছরের জুনিওর) প্রমুখ – তাঁর সহপাঠী ছিলেন। ফ্রেডরিক হয়েল, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ব্রায়ান জোসেফসন, স্টিফেন হকিং, জিম মারলিস, জন টেলর, ডাইসন, প্রফেসর আব্দুস সালাম, রিচার্ড ফাইনমেন, হুজিহিরো আরাকি, স্যার মাইকেল আটিয়া, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রমুখ ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

ড. জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন বহুমাত্রিক জ্ঞানের অধিকারী। তবে মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত তিনি। মহাবিশ্বের পরিণতি কী হতে পারে বা কী হবে, এই জটিল বিষয়টা নিয়ে লেখা তাঁর ‘দ্য আল্টিমেট ফেট অব দি ইউনিভার্স’ (মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি) বইটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশ হওয়ার পর বিজ্ঞানী মহলে বেশ হইচই পড়ে যায়। বইটি পরে জাপানি, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ ও যুগোস্লাভ ভাষায় প্রকাশিত হয়। ১৯৮৪ সালে তিনি W B Bonnor – এর সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন ‘ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি’ এবং ১৯৮৫ সালে রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি’। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস তাঁর তিনটি বই প্রকাশ করেছে। তিনটি বইই কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড, প্রিন্সটন, হার্ভার্ডসহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। হকিং বলেছিলেন, ‘জেএন ইসলাম আমার রুমমেট, বন্ধু এবং আমরা ছিলাম পরস্পর পরস্পরের শিক্ষক।’ ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হকিং যেসব বিজ্ঞানীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন, তন্মধ্যে জেএন ইসলাম ছিলেন অন্যতম। তবে এসব বইয়ের তুলনায় তাঁর বাংলায় লেখা বইগুলোকে কোনো অংশে কম মনে করেন না তিনি। বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত ‘কৃষ্ণ বিবর’ (ব্ল্যাকহোল) এবং রাহাত-সিরাজ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’ ও ‘শিল্পসাহিত্য ও সমাজ’ নামক বইগুলি তাঁর লেখা অন্যান্য বইয়ের মধ্যে অন্যতম। শেষোক্ত বই দুটি মূলত সংকলন। এ ছাড়াও তাঁর দুটি জনপ্রিয় আর্টিকেল আছে। একটি হলো ‘দ্য আল্টিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ’। পরে এটির স্প্যানিশ সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে। আরেকটি হলো ‘দ্য ফার ফিউচার অব দ্য ইউনিভার্স, এনভেডর’। এই আর্টিকেলটি জার্মান, ডাচ ও ইতালিয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাঁর লেখা গবেষণাপত্রের সংখ্যা প্রায় ৬০। ড. নজরুলের তত্ত্বাবধানে এ পর্যন্ত প্রায় দশজন পিএইচডি ও প্রায় আটজন শিক্ষার্থী এম.ফিল. ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটির এবং কেমব্রিজের শিক্ষার্থী রয়েছেন দুজন। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব থিওরেটিক্যাল এস্ট্রোনমির স্টাফ মেম্বার ছিলেন। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে আরম্ভ করে আমেরিকার প্রিন্সটন ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিসহ (যেখানে আইনস্টাইন তাঁর শেষ বিশ বছর কাটিয়েছিলেন) অনেক খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক, ভিজিটিং অ্যাসোসিয়েট বা মেম্বার হিসেবে কাজ করেছেন। সারা বিশ্বে বিজ্ঞানী মহলে জেএন ইসলাম জিনিয়াস ইসলাম নামেও পরিচিত ছিলেন। স্টিফেন হকিং মহাবিশ্ব নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন, ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ নামে বই লিখে দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাতও হয়েছেন। তবে জামাল নজরুল ইসলাম মহাবিশ্বের উচ্চমার্গীয় বিষয় নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন তারও আগে। হকিংয়ের প্রথম বই A Brief History of Time প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে এবং জামাল নজরুল ইসলামের প্রথম বই The Ultimate Fate of The Universe প্রকাশিত ১৯৮৩ সালে। সারাবিশ্ব দাপিয়েও শুধু নিজের দেশ আর মানুষের কথা ভেবে বার বার ফিরে আসার চেষ্টা করেছেন নিজ দেশের নিজ জেলার ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে’। হায়, এত বড় মানুষটিকে ১৯৮১ সালে গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে মাত্র ৩০০০ টাকা বেতন দিতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কিছুতেই রাজি হয়নি। কেমব্রিজ ভার্সিটির অধ্যাপকের পদ, সোয়া লাখ টাকা বেতন; সম্মানের লেভেলটা বুঝতে পারছেন তো? এই চাকুরি অবলীলায় ছেড়ে দিয়ে এইদেশে চলে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার চাকুরিতে। ভাবতে পারছেন? আপনি কিংবা আমি হলে এই লোভনীয় সুযোগ হাতছাড়া করতে পারতাম? হকিংয়ের বন্ধু আর রুমমেট ‘ড. জামাল নজরুল ইসলাম’ বিশ্বের রথি মহারথিদের দৃষ্টি তাঁর দিকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন একটি চিন্তা আর একটি বই দিয়ে। তাঁর গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই পদার্থবিজ্ঞানের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তাঁর অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ওয়েইনবারগ। তিনি বলেন, ““we are particularly indebted to Jamal Islam, a physicist colleague now living in Bangladesh. For an early draft of his 1977 paper which started us thinking about the remote future” । ভাবনার আকাশে কি সূর্য উঁকি দিচ্ছে ? কোন মাপের মানুষ ছিলেন তিনি? নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম বলেছিলেন, “এশিয়ার মধ্যে আমার পরে যদি দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নোবেল পুরস্কার পায়, তবে সে হবে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম।” লক্ষ টাকা আর বিলেতের আয়েশি জীবনের মোহ ছেড়ে যে ব্যক্তিটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২৮০০ টাকায় শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন শুধু নাড়ির টানে, তারই সৃষ্টি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের “রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিকাল সায়েন্স” আজ বিশ্বে উচ্চতর গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

লন্ডনে অবস্থান কালে ২৫ শে মার্চের মধ্য রাতে পূর্ব পাকিস্তানে চালানো ““Operation Search Light” ও পরবর্তী নৃশংস হত্যাকান্ড তাঁকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। এই মানুষটাই কিন্তু ১৯৭১ সালে সর্বপ্রথম ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছিলেন। চতুর্দশ নদী বেষ্টিত ভূমিতে যে বঙ্গসন্তানের জন্ম একদিন সে এই ছোট্ট দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ বিশাল পৃথিবীর অনেক বিস্তৃত ভূমিতেই শুধু বিচরণ করেনি, পৃথিবীর মাটিতে শক্ত করে পা রেখে চোখ রেখেছেন দূর আকাশের লক্ষ-কোটি তারার পানে। তাঁর দৃষ্টি এতই প্রখর ছিল যে তিনি শুধু আকাশভরা সূর্য তারা দেখেই ক্ষান্ত হন নাই, তিনি তাদের অদূর ভবিষ্যৎও দেখতে পেয়েছিলেন। আর তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এই মহাবিশ্বের অদূর ভবিষ্যতের দূরদ্রষ্টা – তিনিই আমাদের স্যার ড. জামাল নজরুল ইসলাম। আমরা আপনার মূর্খ ছাত্র। আপনার প্রয়াণের অষ্টম বর্ষে (১৬ই মার্চ, ২০১৩) এসে বুঝতে পারছি, আপনি আরও দৃঢ়ভাবে আমাদের মানস্পটে ঠাঁই করে নিয়েছেন। আপনি যেখানেই থাকুন স্রষ্টা আপনাকে ভালো রাখুন। এই প্রার্থনাই করি। আর শুধু যথাসময়ে আপনাকে চিনতে ও বুঝতে না পারার জন্য আমাদের ক্ষমা করে দেবেন স্যার।

লেখক:
আনোয়ারুল আজীম খান অঞ্জন
প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ
ম্যানেজিং পার্টনার : ওয়ার্কম্যান ইঞ্জিনিয়ারিং

***********************************
বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম

কর্মক্ষেত্র
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কেম্ব্রিজের ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমিতে কাজ করেন। মাঝে ১৯৬৮তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে অবস্থিত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্ট্যাডিতে ভিজিটিং সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্স রিসার্চ ফেলো এবং ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মনে সিটি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী ১৯৮৫ সালে জামাল নজরুল ইসলামকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। ১৯৯৪ সালে তিনি ন্যাশনাল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি মেডেল পান। ১৯৯৮ সালে ইতালির আব্দুস সালাম সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাঁকে মেডাল লেকচার পদক দেওয়া হয়। তিনি ২০০০ সালে কাজী মাহবুবুল্লাহ ও জেবুন্নেছা পদক পান। ২০০১ সালে লাভ করেন একুশে পদক। ২০১১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অবদান রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন
আজীবন সম্মাননা পদক পান।

রচিত গ্রন্থসমূহ
১. দ্য আলটিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স (১৯৮৪)
২. ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪)
৩. রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি (১৯৮৪)
৪. অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি (১৯৯২)
৫. স্কাই অ্যান টেলিস্কোপ
৬. দা ফার ফিউচার অব দা ইউনিভার্স
৭. কৃষ্ণবিবর
৮. মাতৃভাষা ও বিজ্ঞানচর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ
৯. শিল্পসাহিত্য ও সমাজ