ঢাকা ১১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গল্পের প্লট

এক
এই লেখাটা শুরু করার আগে অপ্রাসংগিক একটা প্রসঙ্গ লিখতে হবে। অপ্রাসংগিক বিযয়ও অনেক সময় প্রসঙ্গের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। পেপার আমি পড়ি না। পেপার পড়ার সময়ও পাই না। তাই বলে খুব ব্যস্ত থাকি তাও না। তারপরও যে সারাদিন কি করে সময় কাটাই তাও বলতে পারি না। একটা পেপারের সন্ধানে আমি রমনা সংলগ্ন আইইবিতে অপেক্ষা করছি। ঐ দিনের পেপারটা আমার দরকার, কোথাও খুঁজে পাই নাই। শেষ পর্যন্ত আমার এক বন্ধুর কাছে ঐ দিনের পেপার আছে জানতে পারলাম। যার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমার ঐ বন্ধুটির নাম স্বপন। বন্ধুটি আমার বেশ সহজ সরল। যে কয়জন আমার মঙ্গল চায় তাদের মধ্যে সে অন্যতম। একসাথে পড়াশুনা করলেও তার সাথে আমার বন্ধুত্বটা ছাত্রজীবনে তেমন গড়ে ওঠেনি। বন্ধুত্বটা গড়ে ওঠে কর্মজীবনে। স্বপন তিন মাস আগে চাকুরীতে যোগদান করে। আমি তিন মাস পরে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগদান করি। আমি যখন যোগদান করতে যাই, সে আমাকে রিসিভ করে এবং অফিসিয়াল ফরমালিটি পালনে সর্বাত্মক সহায়তা করে। অফিসিয়াল কাজ শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। যে সময় অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম ঠিক সে সময় খবর এল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চারটি মোটর সাইকেল ছিনতাই হয়ে গেছে।

মোটর সাইকেল উদ্ধার করতে হবে। নির্দেশনা আসলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তার নিজস্ব লোকবল দিয়ে উদ্ধার করবে। অবাক হলাম। অবাক হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই নির্দেশনার আওতায় আমাদের নাম জানতে পারলাম। আমার আর স্বপনের ডিউটি মুক্তারপুর ঘাটে। ব্রীজ তখনও হয় নাই। আমরা দুজনে ঘাটে চলে এলাম। হাতে ওয়াকিটকি সেট। আমাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঘাটে অবস্থান করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ বাক্যটা টেলিভিশনে শুনতাম, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। “পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ……….এলাকার মানুষদেরকে ………… এলাকা
থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছে”। কিন্তু কখনো বা কোনোদিন পরবর্তী নির্দেশ প্রত্যাহার করার কথা শুনতাম না।

আমরা দুজনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার চাকুরীর প্রথম দিন। প্রথম চাকুরীর দায়িত্ব ও প্রথম পরবর্তী নির্দেশ। আমার দায়িত্ব পালনের আগ্রহের সীমা নেই। কিন্তু দায়িত্বটা কিভাবে পালন করব বা এ দায়িত্বে কীভাবে সফল হবো বুঝতে পারছিলাম না। খুব আগ্রহ সহকারে সকল যানবাহন খেয়াল করছি। মোটর সাইকেলের নাম্বার প্লেট ভালো করে খেয়াল করছি। মিলিয়ে দেখছি, মিলছে না। আমার হাতে ওয়াকিটকি সেট, এটাকে কোথায় রাখব বুঝতে পারছি না। কখনও হাতে রাখছি, কখনও প্যান্টের পকেটে আবার কখনও বা কোমরে ঝুলিয়ে রাখছি। ওয়াকিটকি সেট হাতে দেখে কেউ কেউ গোয়েন্দা পুলিশ মনে করছে, ভয় করছে। সম্মান করছে, আমার ভালই লাগছিল। বিনা কারণে মানুষ ভয় পেলে বা সম্মাণ করলে বেশ ভালই মজা লাগে। নিজেকে কমান্ডো মনে হচ্ছিল।

রাস্তাতে যখনই কোনো মোটরসাইকেল দেখা যাচ্ছিল, স্বপন বেশ উত্তেজিত হয়ে যায়। তার ঐ উত্তেজনার মধ্যে ভয়ের ছাপ ছিল ষ্পষ্ট। হারিয়ে যাওয়া মোটর সাইকেলের সাথে নাম্বার মিলছে না। রাত গভীর হচ্ছে, ঘাটে নীরবতা নেমে আসছে। রাত যত বাড়তে থাকে আমার মাঝে প্রথম দায়িত্ব পালনের আগ্রহ কমতে থাকে। রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে, আমার মাঝে কমান্ডো কমান্ডো যে ভাব ছিল তা চৌকিদারে এসে নামে। বাবা মা কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ার করলো, এজিএম (নিপর) পদে চাকুরীতে যোগ দিলাম। তা প্রথম দায়িত্ব পেলাম ঘাট পাহারা দেওয়ার। মনের ভিতর কেমন জানি হাহাকার করে উঠলো। আমি একটু বিরক্ত সহকারে বললাম, “কিরে এটা আবার কি দায়িত্ব ?”

̄স্বপন মুচকি হাসলো। রাস্তার দিকে তার চোখ। একটুও সরে না। উওর না পেয়ে আবার বললাম, “এটা হলো ? এটা আবার কেমন দায়িত্ব, পাহারা দেওয়ার, তাও আবার ঘাটে। প্রথম দিনেই তো চৌকিদার বানালো !”

স্বপন এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “কেবল যোগদান করলি, কিছুদিন যাক তার পর দেখবি দায়িত্ব কাকে বলে, আর অফিস অর্ডার কাকে বলে”

রাত যত বাড়তে থাকে আমার আগ্রহ শূন্যের কোটায় নেমে আসে এবং তা অবহেলায় রূপ নেয়। “পরবর্তী নির্দেশ” প্রত্যাহারের কোনো নির্দেশনা আসছে না । রাত সাড়ে তিনটার দিকে ধৈর্য আর কুলায় না। চলে যেতে চাই কিন্তু স্বপন রাজী হয় না। অবশেষে চলে আসি নির্দেশনা ছাড়াই।

মোটর সাইকেলের কোনো হদিস নাই। জানলাম “ পরবর্তী নির্দেশ ” প্রদানকারী নির্দেশ প্রত্যাহার না করেই ঘুমুচ্ছে। আর আমরা মুক্তারপুর ঘাটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোটর সাইকেলের নাম্বার দেখছি। বুঝলাম এখানকার “পরবর্তী নির্দেশনাও” আবহাওয়ার মতই। চাকুরীর প্রথম দিনে প্রথম দায়িত্ব থেকে যে অনীহা জন্ম নেয় , সে অনীহা থেকে আর বের হতে পারি নাই। চাকুরীটা একসময় ছেড়ে দেই। ছোট বিষয়ও মনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে, জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

আমি একজনকে চিনতাম। অল্প অল্প জানতামও। আমার একটা প্রয়োজনে তার সাথে পরিচয় হয়। বছর দুয়েক আগের ঘটনা। তার নাম মুবীন রহমান খোকা। বেশ লম্বা। লাল টকটকে ফর্সা; মাথা ভর্তি চুল, চুল গুলো বেশ বড়, বয়স বায়ান্ন-তিপ্পান্ন হবে। লোকটির ভ্রূ বেশ মোটা। আমি উনার কাছে একটা কাজে গিয়েছিলাম । তিনি আমার কাজটি করতে পারলেন না। দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমাকে দুপুরের খাবার খাওয়ালেন। খাবার শেষে দই মিষ্টি আনালেন তিনি। আমি তার প্লেটে দই না দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, “ দই আপনি খান না ?”

“খাই” বলে তিনি মিষ্টি খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন। আমি অবাক কন্ঠে বললাম,“ তাহলে দই নিলেন না যে আপনি ” তিনি উওর দিলেন না, মাথা নিচু করে মিষ্টি খাচ্ছেন ধীরে ধীরে ছোট পিস করে। এবার তিনি আমার দিকে তাকালেন। তার চোখ টলমল করছে। তিনি চোখের পানি মুছছেন। বুঝলাম দই খাওয়ার সাথে তার একটা আবেগ জড়িত। আমি তার দই না খাওয়ার কারণটা জানতে চাইলাম। তিনি বললেন আমাকে। সেটা এখন লিখছি না। লিখব শেষে। তার এই দই না খাওয়ার কারণ জানার পর তার প্রতি আমার শ্রদ্বাবোধ জন্মায় অনেক বেশি। পঁচিশ বছর আগের একটা ঘটনা তাকে আজও কাঁদায়, যে মানুষ পঁচিশ বছর আগের ব্যর্থতাকে কাঁধে নিয়ে দই খাওয়া ত্যাগ করতে পারে, স্মৃতিকে ধরে রাখতে চায়, তাকে তো সম্মান করাই যায়।

জানলাম সেই মুবীন সাহেব তার স্ত্রীকে খুনের চেষ্টা করেছেন, আর কাজের বুয়াকে মেরে ফেলেছেন। উনার স্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে; তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। বিষয়টা আমি বিশ্বাস করি নাই। হয়তো তার প্রতি শ্রদ্বাবোধ থেকেই আমার এরূপ হয়েছে। যার জন্য কৌতুহলও কম না। সেজন্যই পেপারটা খুঁজছি। ঈদের লম্বা ছুটির পর ঢাকা এসেই শুনতে পারি লোকমুখে। যার জন্য পেপারটা খুঁজছি।

বন্ধু স্বপনের অপেক্ষায় আছি। তার আসতে বেশ দেরি হচ্ছে। এক সময় সে এসে যায়। এসেই একটা হাসি দেয়। তাকে আমি হাসতেই দেখি সারাক্ষন। আমার কাছে এসে দাঁড়াতেই তার টেলিফোনটা বেজে উঠে। মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়েই আমার
দিকে তাকায়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি,
“ কিরে কার ফোন ? ”
“ তোর ভাবির।। ”
“ রিসিভ কর, দেখ কি বলে ? ”
“আরে কি আর বলবে ? বলবে আলু নাই, লবণ নাই, ডিম আনো, এটা লাগবে, ওটা লাগবে।। ”

আমি হাসতে থাকি তার কথাতে। ফোনটা রিসিভ করে একটু দূরে গিয়ে কথা বলে, কথা শেষ করে আমার কাছে এগিয়ে আসে। একটু গম্ভীর হয়ে হয়ে বলে,
“ দ্যাখ মানুষ টাকার জন্য কি না করে ? ”
“কেন ? কী হলো আবার ?”
”স্বপন অবাক হয়ে বলে,“কেন তুই জানিস না ?”
“কী ”
“আরে জেরিন রহমান, লেখিকা জেরিন রহমান আছে না ?”
“হ্যাঁ। ”
“আরে তার স্বামী তাকে টাকার জন্য খুন করতে চেষ্টা করেছিল, লেখিকাকে বাঁচাতে গিয়ে তার কাজের বুয়া মারা গেছে; জেরিন রহমানবাঁচবে বলে মনে হয় না,” থেমে থেকে কথা গুলি বলছিল স্বপন । আমি অবাক হলাম না। স্বাভাবিকভাবে বললাম, ”তাই ? কেন ?”

স্বপন তার চোয়াল শক্ত করে, “আরে টাকার জন্য, তার স্বামী মুবীন রহমান একটা পশু। স্ত্রীর টাকার প্রতি তার লোভ। আর তার ছেলে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।”
“তাই ?”
“হ্যাঁ, পশুটা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, এত বড় একজন লেখিকা, তাকে মারতে গেছে। ব্যাটাকে পাইলে তাকে আমি তিনটা চড় মারতাম।।”
“আহা, তিনটা চড় মারার দরকার কি ? একটা চড় মারলেই তো প্রতিবাদ হয়।”
স্বপন হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে বলে, “ নারে সত্যিই আমি দুঃখ পেয়েছি। আমি তো জেরিন রহমানের ভক্ত। মনে হয় বাঁচবে না। আমি আমার কৌতূহলটা চেপে রেখেছিলাম। স্বপনের কথা গুলো মুবীন রহমানের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধে আঘাত হানছিল। কিন্তু তার দ্বায়িত্ব খুবই কম সময়। আমি তার কাছ থেকে পেপারটা চাইতেই স্বপন তা আমার দিকে এগিয়ে দেয়, আর বলে “পেপারে সব আছে।” স্বপন ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে থাকে,“ধরা পড়বেই। সাংবাদিক, লেখকরা যেভাবে লেগেছে তাতে ধরা পড়তেই হবে। আগামীকাল প্রেস ক্লাবে মানব বন্ধন আছে। আমি আসব, তুইও আসিস।”
আমি বললাম, “কেন ?”
“প্রতিবাদ করতে।। ”

 

দুই
“আহা ইউস্যুফগুলের ভূষি খাও” বাক্যটা বেশ জোরে শুনতে পায় নিপা। নিপা চট করে লোকটির দিকে তাকায়। নিপার সঙ্গে থাকা বান্ধবী এমাও। নিপা তার ডান হাতটা দিয়ে মুখটা চেপে ধরে এমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে লোকটির দিকে তাকানোর জন্য; সে নিজেও তাকায় লোকটির দিকে।

লোকটি বেশ স্মার্ট, মোবাইল ফোনে কথা বলছেন আর হাত নাড়াচ্ছেন। “আহা ………..ভূষি কখন খাবে তাও জানো না ?” থেমে থাকে লোকটি। ডান কানে থাকা মোবাইল ফোন কানে ধরে বাম হাত দিয়ে। আর ডান হাত দিয়ে বোবা বধিরদের যে ভাবে আকার ইঙ্গিতে বোঝানো হয় সে রকম ভাবে হাত নাড়াতে থাকে।

অপর প্রান্ত থেকে উত্তর কি আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না। লোকটি আবার বলছে,“ আহা ভূষি কেউ খাবারের পরে খায় না কি ? ” হেসে মুখটা কেমন জানি করে। অপর প্রান্ত থেকে তার সম্ভবত কঠিন জবাব আসছে। লোকটা আবার বলে, “হ্যা সবাই সব কিছু জানে না। হঁ্যা আমি তো জানিনা বলেই কমোডের পানি দিয়ে কুলি করেছি। এ কথা আর কত বার বলবে তুমি ?”

কিছুক্ষন থেমে থেকে বলে, “ শোনো আমিও কোনোদিন ভূষি খাই নাই, এটা হল সিম্পল লজিক । লজিক শোনো খাবারের আগে খেলে কি হবে ? খাবার তো আর বের হবে না। আগে ভূষিই বের হয়ে যাবে । তোমার কষা বাথরুম আর লুজ হবে না। এজন্য তোমাকে খাবারের পরে খেতে হবে। অর্থাৎ ভূষিরস্তরটা থাকবে সবার উপরে, তার নীচে থাকবে খাবারের স্তর। ভূষির ধর্ম কি ? তাড়াতাড়ি পেট থেকে বের হয়ে যাওয়া। সে বের হতে চাইবে, সে তো আর একা বের হতে পারবে না। তোমার কষা বাথরুম ডিঙিয়ে, সবকিছু নিয়ে বের হয়ে আসবে, সিম্পল জিনিস।” সাথে লোকটি, হাসি হাসি ভাব করে । অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে মুখটা বেশ শক্ত করে বলে,” ভূষি তোমার সব কিছু দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে হালুয়া বানিয়ে ছাড়বে, হা…লু…য়া।’’

নিপা আর এমা হাসতে থাকে। হাসির শব্দটা একটু জোরে হওয়াতে লোকটি তাদের দিকে তাকায়। নিপা ভেবেছিল লজ্জা পাবে লোকটি, তিনি লজ্জা না পেয়ে বেহায়ার মত হাসছেন। লোকটিকে হাসতে দেখে নিপা আর এমা হাসির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এবার মনে হয় লোকটি লজ্জা পায়। লোকটি তার ডান হাতটার দিকে তাকায় । নিপা আর এমা ডান হাতের দিকে তাকিয়েই হাসছে। কারণ লোকটা কথা বলার সময় তার ডান হাত ঝাড়ছিল, আর কথা বলছিল। ডান হাত দিয়ে এমনভাবে ইঙ্গিত করছিল যেন ভূষি আর কষা বাথরুম দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে বের হওয়ার পদ্ধতি।

নিপা মনে করেছিল লোকটি লজ্জা পেয়েছে। কিন্তু তার ধারনা ভুল। কারণ লোকটি তখন উচ্চস্বরে বলছে, “ আরে কত শক্ত হবে, ভূষি তুমি বেশি করে খাও। আমি বলছি ভূষি তোমার শক্ত কষা মলকে হোটেলের ডাউলের মত পাতলা করবে। নরম হবে না মানে, মলের বাপ নরম হবে। দাঁড়াও আমি আসছি।” বলেই লোকটি তার মোবাইল ফোনটি তার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকে।

নিপা আর এমা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে একে অন্যের গায়ে। এমা হাসতে হাসতে বলে,“নিপা তোর বর কিন্তু এরকম হবে।” নিপা প্রাণ খুলে হাসছিল। এমার কথা শুনে তার হাসিটা থেমে যায়। চোখ বড় করে বলে, “ আমার বর যদি এরকম হয় তাহলে তোর বরের পেটে শক্ত কষা হবে, বলে থামে নিপা। আবার হাসতে হাসতে বলে,“ পাথরের মত শক্ত আর সুপার গ্লু -এর মত কষা ” দুজনে হাসতে থাকে। দুজনে হাসি থামিয়ে হাঁপাতে থাকে। নিপা একটু চিন্তা করে বলে, “দাঁড়া, দাঁড়া এখন কয়টা বাজে ?”
এমা বলে, “কেন ? টাইম দেয়া আছে ?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। ফেসবুকে চ্যাট করার আছে। সময় হয়ে গেছে ”
“বেশিক্ষণ কিন্তু দাঁড়াতে পারবো না।”
নিপা তার মোবাইলটা বাম হাতে নিয়ে বলে, “কথা বলিস না , দ্যাখ আমি
যা যা বলছি সত্য। তুই প্রমাণ পাবি।”
“ওমা তাই ?”
নিপা মাথা ঝুঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ।”
“সত্যিই সব বলে দেয় ?”
“হ্যাঁ রে বাবা”
তারা বসে পড়ে দুজনে, নিপা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে যায়। ম্যাসেঞ্জারে
ম্যাসেজ আসে, “কেমন আছো”
নিপা : ভালো, তুমি ?
: ভালো, তোমাকে দারুণ লাগছে।
: ওমা তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ ?
: হু ।
এমাও ম্যাসেজ গুলো পড়ছে। নিপা বলতো , তুই কি জামা পরে আছিস ?

।।
নিপা , ম্যাসেজ দেয়- বলতো আমি কি জামা পরে আছি
: কালো, লাল ও সাদা প্রিন্টের জামা, আজ বোরখা পড়নি, মাথায় হিজাবও নাই, চোখে কাজল দিয়েছো।
: আচ্ছা বলতো আমার সাথে কে আছে ?
: জানি না। আমি শুধু তোমাকে জানি। তোমার সম্পর্কেই বলতে পারব।
: কেন বলতে পারবে না ?
: কারন শুধু তোমাকেই ভালবাসি। এমা অবাক হয়ে যায় ।
এমা নিপাকে বলে, “আজ ফজরের নামাজ পড়েছিস ?”
নিপা : না।।
এমা : তাহলে এটাও জিজ্ঞাসা কর।
নিপা হাসতে হাসতে বলে, ওটাও বলে দেবে।
নিপা ম্যাসেজ দেয়,“ বলতো আমি আজ নামাজ পড়েছি কি না ?”
: নিপা তোমার আমার ভালবাসা নিয়ে সন্দেহ আছে তাই না ?
: কেন ?
: শুধু যাচাই করছো, শোনো যাচাই করে ভালবাসা হয় না। না তুমি নামাজ আজ পড়তে পারনি। তুমি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেছো। নাস্তা করেছো শুধু একটা টোস্ট আর ডিম , আর এককাপ চা, কি ঠিক আছে ?
: হ্যা ।
: বাই, ব্যস্ত আছি।
: রাগ করলে ?
: না, একটু মন খারাপ, আবার রাতে কথা হবে। এখন ব্যস্ত ।
নিপা মনটা একটু খারাপ করে । আস্তে আস্তে বলে, “রাগ করেছে মনে হয়।”
এমা অবাক বিষ্ময়ে বলে, “এটা কি করে সম্ভব ?”
নিপা বলে,“আমিও তো তাই বলি।”
“আচ্ছা নিপা তোর পরিচিত কেউ না তো ?”
“আরে না। পরিচিত হলেও ফজরের নামাজের কথা বলবে কিভাবে ?
সকালের নাস্তার কথা বলবে কিভাবে ?”
“তাও ঠিক।” ঠোঁট উল্টিয়ে এমা বলে “অবিশ্বাস্য। তবে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আজ রাতে আমি তোর সাথে থাকব, ওকে যাচাই করব, সত্য হলে সত্য তা ছাড়া ধরা খাবে” এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে।
নিপা চোখের ইশারায় বলে “কিভাবে ?”
“সেটা রাতেই বুঝবি।” এমা নিপার হাত ধরে বলে, “ সত্যি করে বলতো, কতদিন ধরে ওর সাথে পরিচয় ? নামটা তো আজও বললি না।”
“ওর নাম ফনি” বলে থামে নিপা, চোখটা বন্ধ করে , মাথা দোলাতে থাকে, চোখ খুলে বলে, “প্রায় মাস ছয়েক হবে। বা তারও বেশি হবে।”
‘ও’ বলে এমা একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। “ আসলে সম্পর্ক গভীর হলে অবশ্য বোঝা যায়। ”
নিপা মাথা দুলিয়ে বলে, “তা ঠিক। কিন্তু … ” থেমে যায় নিপা ।
: কিন্তু কি ?
: কিন্তু ইসলামে এরকম কিছু তো আমি শুনি নাই। পড়ি নাই। এজন্য এটা আমার বিশ্বাস হয় না। ”
: কি রকম ?
: বিয়ের আগে একজন ছেলে বা একজন মেয়ের সম্পর্ক গভীর হওয়ার কোন বৈধ কাহিনী বা উদাহরণ নাই। ”
: নাই বলে হতে পারে না ?
নিপা চোখ বন্ধ করে মুখটা গম্ভীর করে বলে, “বলতে পারবো না।”
“আচ্ছা এমা তোকে কি ও দেখেছে ?”
“হ্যা। বলে প্রতিদিনই দেখি।” থামে নিপা । চোখ বড় বড় করে বলে,
“জানিস ?”
“কী”
“একদিন ………”
“কি ?”
“তুই তো জানিস আমি টিপ দেই না। একদিন গোসল করে টিপ দিলাম। শাড়ী পরলাম। সেদিন ওর প্রথম মেসেজ ছিল। টিপ কেন দিলাম জানি না।”
“বলিস কি ?”
”হ্যাঁ শুধু তাই না, টিপটা না আমার কপাল থেকে পড়ে গেল। সেটাও না ও বলে দিয়েছিল !”
“ওমা বলিস কি ? আমার কেমন জানি লাগছে রে নিপা” থেমে গম্ভীর হয় এমা।
”লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ ……… আচ্ছা তুই কি বুঝতে পারিস ?”
“আরে না। আমি কিছুই বুঝতে পারি না ?”
নিপা মুখটা গম্ভীর করে। আনমনা হয়ে যায়। মাথা দুলিয়ে বোঝাতে চায় ভালবাসে। আস্তে করে বলে “প্রচন্ড। প্রচন্ড ভালোবাসি। আস্তে আস্তে যে ভালবেসে ফেললাম বুঝতে পারলাম না। শুধু …….থামে নিপা। থেমে থাকে কিছুক্ষণ চোখবন্ধ করে, “ জানিস আমি ওকে দেখতে পাই । আমিও বুঝতে পারি। ওটাও মিলে যায়। আমি একদিন বললাম ওকে, ‘তুমি সিগারেট খেয়েছো’ সেটাও মিলে গেল। ফনি সিগারেট খায় না। সেদিন প্রথম সিগারেট খেয়েছে।”
এমা চোখ বড় বড় করে বলে, “ওমা এটা বলিস নি তো। তাকে তো বাস্তবে দেখিস নি।”
“হ্যা বাস্তবে দেখিনি। ছবিতে দেখেছি।”
“তুইও যা বলিস তা মিলে যায় ?”
“হ্যা” ফনি বলে সব মিলে যায়। এতেই ও অবাক।
এমা বেশ গম্ভীর হয়ে বলে, ” তোদের ভালবাসা অনেক গভীর। তুই এতো দিন বলিস নাই কেন ?
এমা নিপার দিকে তাকিয়ে বলে, “আর কে জানে ?”
“তুই আর মা।। ”
“তোর মা কি বলে ?”
“মা বলে ছেলেটির মন ভালো, পবিত্র।”
“ওমা তাই ? তোর মা তো আবার লেখিকা মানুষ। কবি ভালবাসা, প্রেম ভালমত বুঝতে পারে। তোর মায়ের লেখা প্রেমের গল্প গুলো খুব সুন্দর।”
“মা বলেছে কাউকে কিছু না বলতে। কোনো বান্ধবীকেও না।”
“কেন ?”
“তা জানি না। তবে একদিন বললো এসব বললে নাকি ভালবাসার গভীরতা নষ্ট হয়ে যায়।”
“তাও ঠিক। কাউকে কিছু বলিস না।”
“হুঁ”
“আচ্ছা ছেলেটার বাড়ি কোথায় ?”

: সীমান্তে।।
: মানে?
হাসে নিপা। হাসতে হাসতে বলে “বগুড়া ও নওগাঁর সীমান্তে” “মানে” চোখ বড় বড় করে এমা বলে,
“আরে শোন, বগুড়ার সান্তাহারে ঢাকা রোড নামে একটা জায়গা আছে এর পরই নওগাঁ জেলা, এখানে একটা গ্রাম আছে ধামকুড়ি, ঐ গ্রামেই বাড়ি।
“ও আচ্ছা।।”

নিপার মনটা হঠাৎ করেই কেন জানি খুব ভাল লাগছে। ফনির কথা তার বলতে খুব ভালো লাগে। এই তো সেদিন ফনি তাকে একটা মেসেজ দিল তুমি খুব সুন্দর। তারপর সে মাঝে মাঝেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দ্যাখে। সে নিয়মিত নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে, নিজের রুপ বা সৌন্দর্যের প্রতি একটু উদাসীন। কিন্তু ফনির এ কথাতে সে নিজেকে আরও সুন্দর করতে চায়। সে এমনিই ফর্সা। কিন্তু আরও ফর্সা হতে পারলে আরও ভালো। সামনে তার এইচ.এস.সি পরীক্ষা। বেশ উৎফুল্ল সহকারে বলে, “জানিস ওর বাবা না জানে”
এমা বলে, “তোদের বিষয় ?”
“হুঁ” মুখটা হঠাৎ করে গম্ভীর করে বলে নিপা, “জানিস আমি না কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি।”
অবাক চোখে বলে “কেমন ?”
“কেমন ওটা বোঝাতে পারব না” থামে নিপা। নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে রাখে। হঠাৎ করেই চোখ মেলে বলে, “কেমন যেন সারাক্ষণ ফনির কথা মনে হয়। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় ও কি করছে আমি বুঝতে পারি।”
নিপাকে থামিয়ে দিয়ে এমা বলে, বলতো এখন কি করছে। নিপা বলে “এখন সে সিগারেট খাচ্ছে, আমার মন বলছে ফনি এখনই ফেসবুকে ইন করবে।। ”
“আচ্ছা দেখি তোর কথা সত্যি হয় না কি ? তুই ফেসবুকে ইন কর।। ”
“আমার ইন করতে হবে না আমি ইন অবস্থাই আছি।। ”
নীরবতা তাদের মাঝে। মোবাইলের স্কীনে তাকিয়ে তারা দুজনে। নিপার মাঝে একটু টেনশন কাজ করছে। সে ভালবেসে ফেলেছে ফনিকে। তার কথা সত্য না হলে এমা হাসবে। বলবে তোর ভালবাসা দুর্বল। নিপা মাঝে মাঝে এমার দিক তাকিয়ে মোবাইলের ̄স্কীনের দিকে তাকাচ্ছে। নিপার চোখ মুখ ভারি হয়ে আসছে। কেঁদে দেবে সে। এমা বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে, “তুই এত আনইজি হচ্ছিস কেন ?”
“এখনও মেসেজ দিলো না ?”
“আহা, ও জানে তুই ওকে মেসেজ দিতে বলেছিস ?”
“হ্যা জানে।”
হাসে নিপা। কারন তার মোবাইলে স্কীনে ফনির মেসেজ চলে এসেছে।
এমা নড়েচড়ে বসে, তারও মুখটা হাসি হাসি ভাব। বলে,
“ওমা সত্যিই তো। তোর মনের কথা সত্য। ফনি বুঝতে পেরেছে।”
“ দাঁড়া, দাঁড়া, আগে একটু চ্যাট করে নেই।। ”
এমা চুপচাপ দেখতে থাকে।
নিপা মেসেজ দেয়, “একটু আগে কি তুমি সিগারেট খেয়েছ ?”
“হুম অনেক দিন পর। একটা মাত্র। তা তুমি জানলে কিভাবে ?”
“শুধু তুমিই বুঝতে পারো ?”
“না তুমিও পারো।”
এমা বলে, কিরে নিপা,“তোদের সম্পর্ক তো অনেক গভীর।”

“হুম, কাউকে বলিস না।”
“আচ্ছা। ”
নিপা মনোযোগ দিয়ে মেসেজ আদান প্রদান শুরু করে।
“ফনি।। ”
“বলো।। ”
“আমি তোমাকে দেখতে চাই”
“ছবি দ্যাখো !”
“ছবি না সরাসরি।”
“তোমার পরীক্ষার পর।। ”
“তোমার ফেসবুক একাউন্টে আর কোন বন্ধু নাই কেন ?”
“বন্ধু একজনই হয়, সেটা তুমি।। ”
“আমার ভাল লাগে না।। ”
“আমারও।। ”
“ফনি।। ”
“বলো।। ”
“আমার মা কে চেনো ?”
“হঁ্যা। লেখিকা। অনেক ভাল লেখেন।। ”
“ওমা তুমি জানো, চেনো ?”
“হঁ্যা, উনি আমার প্রিয় লেখিকা।”
“হুম, আমার মা।। ”
“জানি।। ”
“আমার বাবাকে চেনো ?”
“হঁ্যা। ওনার নিক নেম খোকা।”
“উনি কেমন ?”
“উনি ? না থাক, বলা ঠিক হবে না। তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে।”
”কেন ?”
“তোমার বাবার থেকে তোমার মা ভাল মানুষ। তাই না ?”
”হঁ্যা।। ”
“ আচ্ছা, রাতে। বাই ! ”
“দেখছিস বাই বলেই নাই হয়ে গেল !” একটু বির৩ি সহকারে বলে
নিপা।
………………………চলবে।

 

মোঃ কামরুল হাসান কল্লোল

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গল্পের প্লট

আপডেট সময় ১১:২৮:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

এক
এই লেখাটা শুরু করার আগে অপ্রাসংগিক একটা প্রসঙ্গ লিখতে হবে। অপ্রাসংগিক বিযয়ও অনেক সময় প্রসঙ্গের অংশ হয়ে দাঁড়ায়। পেপার আমি পড়ি না। পেপার পড়ার সময়ও পাই না। তাই বলে খুব ব্যস্ত থাকি তাও না। তারপরও যে সারাদিন কি করে সময় কাটাই তাও বলতে পারি না। একটা পেপারের সন্ধানে আমি রমনা সংলগ্ন আইইবিতে অপেক্ষা করছি। ঐ দিনের পেপারটা আমার দরকার, কোথাও খুঁজে পাই নাই। শেষ পর্যন্ত আমার এক বন্ধুর কাছে ঐ দিনের পেপার আছে জানতে পারলাম। যার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমার ঐ বন্ধুটির নাম স্বপন। বন্ধুটি আমার বেশ সহজ সরল। যে কয়জন আমার মঙ্গল চায় তাদের মধ্যে সে অন্যতম। একসাথে পড়াশুনা করলেও তার সাথে আমার বন্ধুত্বটা ছাত্রজীবনে তেমন গড়ে ওঠেনি। বন্ধুত্বটা গড়ে ওঠে কর্মজীবনে। স্বপন তিন মাস আগে চাকুরীতে যোগদান করে। আমি তিন মাস পরে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগদান করি। আমি যখন যোগদান করতে যাই, সে আমাকে রিসিভ করে এবং অফিসিয়াল ফরমালিটি পালনে সর্বাত্মক সহায়তা করে। অফিসিয়াল কাজ শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। যে সময় অফিস থেকে বের হচ্ছিলাম ঠিক সে সময় খবর এল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চারটি মোটর সাইকেল ছিনতাই হয়ে গেছে।

মোটর সাইকেল উদ্ধার করতে হবে। নির্দেশনা আসলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তার নিজস্ব লোকবল দিয়ে উদ্ধার করবে। অবাক হলাম। অবাক হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই নির্দেশনার আওতায় আমাদের নাম জানতে পারলাম। আমার আর স্বপনের ডিউটি মুক্তারপুর ঘাটে। ব্রীজ তখনও হয় নাই। আমরা দুজনে ঘাটে চলে এলাম। হাতে ওয়াকিটকি সেট। আমাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঘাটে অবস্থান করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ বাক্যটা টেলিভিশনে শুনতাম, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। “পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ……….এলাকার মানুষদেরকে ………… এলাকা
থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছে”। কিন্তু কখনো বা কোনোদিন পরবর্তী নির্দেশ প্রত্যাহার করার কথা শুনতাম না।

আমরা দুজনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার চাকুরীর প্রথম দিন। প্রথম চাকুরীর দায়িত্ব ও প্রথম পরবর্তী নির্দেশ। আমার দায়িত্ব পালনের আগ্রহের সীমা নেই। কিন্তু দায়িত্বটা কিভাবে পালন করব বা এ দায়িত্বে কীভাবে সফল হবো বুঝতে পারছিলাম না। খুব আগ্রহ সহকারে সকল যানবাহন খেয়াল করছি। মোটর সাইকেলের নাম্বার প্লেট ভালো করে খেয়াল করছি। মিলিয়ে দেখছি, মিলছে না। আমার হাতে ওয়াকিটকি সেট, এটাকে কোথায় রাখব বুঝতে পারছি না। কখনও হাতে রাখছি, কখনও প্যান্টের পকেটে আবার কখনও বা কোমরে ঝুলিয়ে রাখছি। ওয়াকিটকি সেট হাতে দেখে কেউ কেউ গোয়েন্দা পুলিশ মনে করছে, ভয় করছে। সম্মান করছে, আমার ভালই লাগছিল। বিনা কারণে মানুষ ভয় পেলে বা সম্মাণ করলে বেশ ভালই মজা লাগে। নিজেকে কমান্ডো মনে হচ্ছিল।

রাস্তাতে যখনই কোনো মোটরসাইকেল দেখা যাচ্ছিল, স্বপন বেশ উত্তেজিত হয়ে যায়। তার ঐ উত্তেজনার মধ্যে ভয়ের ছাপ ছিল ষ্পষ্ট। হারিয়ে যাওয়া মোটর সাইকেলের সাথে নাম্বার মিলছে না। রাত গভীর হচ্ছে, ঘাটে নীরবতা নেমে আসছে। রাত যত বাড়তে থাকে আমার মাঝে প্রথম দায়িত্ব পালনের আগ্রহ কমতে থাকে। রাতের গভীরতা বাড়ার সাথে সাথে, আমার মাঝে কমান্ডো কমান্ডো যে ভাব ছিল তা চৌকিদারে এসে নামে। বাবা মা কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ার করলো, এজিএম (নিপর) পদে চাকুরীতে যোগ দিলাম। তা প্রথম দায়িত্ব পেলাম ঘাট পাহারা দেওয়ার। মনের ভিতর কেমন জানি হাহাকার করে উঠলো। আমি একটু বিরক্ত সহকারে বললাম, “কিরে এটা আবার কি দায়িত্ব ?”

̄স্বপন মুচকি হাসলো। রাস্তার দিকে তার চোখ। একটুও সরে না। উওর না পেয়ে আবার বললাম, “এটা হলো ? এটা আবার কেমন দায়িত্ব, পাহারা দেওয়ার, তাও আবার ঘাটে। প্রথম দিনেই তো চৌকিদার বানালো !”

স্বপন এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “কেবল যোগদান করলি, কিছুদিন যাক তার পর দেখবি দায়িত্ব কাকে বলে, আর অফিস অর্ডার কাকে বলে”

রাত যত বাড়তে থাকে আমার আগ্রহ শূন্যের কোটায় নেমে আসে এবং তা অবহেলায় রূপ নেয়। “পরবর্তী নির্দেশ” প্রত্যাহারের কোনো নির্দেশনা আসছে না । রাত সাড়ে তিনটার দিকে ধৈর্য আর কুলায় না। চলে যেতে চাই কিন্তু স্বপন রাজী হয় না। অবশেষে চলে আসি নির্দেশনা ছাড়াই।

মোটর সাইকেলের কোনো হদিস নাই। জানলাম “ পরবর্তী নির্দেশ ” প্রদানকারী নির্দেশ প্রত্যাহার না করেই ঘুমুচ্ছে। আর আমরা মুক্তারপুর ঘাটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোটর সাইকেলের নাম্বার দেখছি। বুঝলাম এখানকার “পরবর্তী নির্দেশনাও” আবহাওয়ার মতই। চাকুরীর প্রথম দিনে প্রথম দায়িত্ব থেকে যে অনীহা জন্ম নেয় , সে অনীহা থেকে আর বের হতে পারি নাই। চাকুরীটা একসময় ছেড়ে দেই। ছোট বিষয়ও মনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে, জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

আমি একজনকে চিনতাম। অল্প অল্প জানতামও। আমার একটা প্রয়োজনে তার সাথে পরিচয় হয়। বছর দুয়েক আগের ঘটনা। তার নাম মুবীন রহমান খোকা। বেশ লম্বা। লাল টকটকে ফর্সা; মাথা ভর্তি চুল, চুল গুলো বেশ বড়, বয়স বায়ান্ন-তিপ্পান্ন হবে। লোকটির ভ্রূ বেশ মোটা। আমি উনার কাছে একটা কাজে গিয়েছিলাম । তিনি আমার কাজটি করতে পারলেন না। দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমাকে দুপুরের খাবার খাওয়ালেন। খাবার শেষে দই মিষ্টি আনালেন তিনি। আমি তার প্লেটে দই না দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, “ দই আপনি খান না ?”

“খাই” বলে তিনি মিষ্টি খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন। আমি অবাক কন্ঠে বললাম,“ তাহলে দই নিলেন না যে আপনি ” তিনি উওর দিলেন না, মাথা নিচু করে মিষ্টি খাচ্ছেন ধীরে ধীরে ছোট পিস করে। এবার তিনি আমার দিকে তাকালেন। তার চোখ টলমল করছে। তিনি চোখের পানি মুছছেন। বুঝলাম দই খাওয়ার সাথে তার একটা আবেগ জড়িত। আমি তার দই না খাওয়ার কারণটা জানতে চাইলাম। তিনি বললেন আমাকে। সেটা এখন লিখছি না। লিখব শেষে। তার এই দই না খাওয়ার কারণ জানার পর তার প্রতি আমার শ্রদ্বাবোধ জন্মায় অনেক বেশি। পঁচিশ বছর আগের একটা ঘটনা তাকে আজও কাঁদায়, যে মানুষ পঁচিশ বছর আগের ব্যর্থতাকে কাঁধে নিয়ে দই খাওয়া ত্যাগ করতে পারে, স্মৃতিকে ধরে রাখতে চায়, তাকে তো সম্মান করাই যায়।

জানলাম সেই মুবীন সাহেব তার স্ত্রীকে খুনের চেষ্টা করেছেন, আর কাজের বুয়াকে মেরে ফেলেছেন। উনার স্ত্রী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে; তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। বিষয়টা আমি বিশ্বাস করি নাই। হয়তো তার প্রতি শ্রদ্বাবোধ থেকেই আমার এরূপ হয়েছে। যার জন্য কৌতুহলও কম না। সেজন্যই পেপারটা খুঁজছি। ঈদের লম্বা ছুটির পর ঢাকা এসেই শুনতে পারি লোকমুখে। যার জন্য পেপারটা খুঁজছি।

বন্ধু স্বপনের অপেক্ষায় আছি। তার আসতে বেশ দেরি হচ্ছে। এক সময় সে এসে যায়। এসেই একটা হাসি দেয়। তাকে আমি হাসতেই দেখি সারাক্ষন। আমার কাছে এসে দাঁড়াতেই তার টেলিফোনটা বেজে উঠে। মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়েই আমার
দিকে তাকায়। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি,
“ কিরে কার ফোন ? ”
“ তোর ভাবির।। ”
“ রিসিভ কর, দেখ কি বলে ? ”
“আরে কি আর বলবে ? বলবে আলু নাই, লবণ নাই, ডিম আনো, এটা লাগবে, ওটা লাগবে।। ”

আমি হাসতে থাকি তার কথাতে। ফোনটা রিসিভ করে একটু দূরে গিয়ে কথা বলে, কথা শেষ করে আমার কাছে এগিয়ে আসে। একটু গম্ভীর হয়ে হয়ে বলে,
“ দ্যাখ মানুষ টাকার জন্য কি না করে ? ”
“কেন ? কী হলো আবার ?”
”স্বপন অবাক হয়ে বলে,“কেন তুই জানিস না ?”
“কী ”
“আরে জেরিন রহমান, লেখিকা জেরিন রহমান আছে না ?”
“হ্যাঁ। ”
“আরে তার স্বামী তাকে টাকার জন্য খুন করতে চেষ্টা করেছিল, লেখিকাকে বাঁচাতে গিয়ে তার কাজের বুয়া মারা গেছে; জেরিন রহমানবাঁচবে বলে মনে হয় না,” থেমে থেকে কথা গুলি বলছিল স্বপন । আমি অবাক হলাম না। স্বাভাবিকভাবে বললাম, ”তাই ? কেন ?”

স্বপন তার চোয়াল শক্ত করে, “আরে টাকার জন্য, তার স্বামী মুবীন রহমান একটা পশু। স্ত্রীর টাকার প্রতি তার লোভ। আর তার ছেলে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।”
“তাই ?”
“হ্যাঁ, পশুটা পালিয়ে বেড়াচ্ছে, এত বড় একজন লেখিকা, তাকে মারতে গেছে। ব্যাটাকে পাইলে তাকে আমি তিনটা চড় মারতাম।।”
“আহা, তিনটা চড় মারার দরকার কি ? একটা চড় মারলেই তো প্রতিবাদ হয়।”
স্বপন হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে বলে, “ নারে সত্যিই আমি দুঃখ পেয়েছি। আমি তো জেরিন রহমানের ভক্ত। মনে হয় বাঁচবে না। আমি আমার কৌতূহলটা চেপে রেখেছিলাম। স্বপনের কথা গুলো মুবীন রহমানের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধে আঘাত হানছিল। কিন্তু তার দ্বায়িত্ব খুবই কম সময়। আমি তার কাছ থেকে পেপারটা চাইতেই স্বপন তা আমার দিকে এগিয়ে দেয়, আর বলে “পেপারে সব আছে।” স্বপন ঠোঁট উল্টিয়ে বলতে থাকে,“ধরা পড়বেই। সাংবাদিক, লেখকরা যেভাবে লেগেছে তাতে ধরা পড়তেই হবে। আগামীকাল প্রেস ক্লাবে মানব বন্ধন আছে। আমি আসব, তুইও আসিস।”
আমি বললাম, “কেন ?”
“প্রতিবাদ করতে।। ”

 

দুই
“আহা ইউস্যুফগুলের ভূষি খাও” বাক্যটা বেশ জোরে শুনতে পায় নিপা। নিপা চট করে লোকটির দিকে তাকায়। নিপার সঙ্গে থাকা বান্ধবী এমাও। নিপা তার ডান হাতটা দিয়ে মুখটা চেপে ধরে এমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে লোকটির দিকে তাকানোর জন্য; সে নিজেও তাকায় লোকটির দিকে।

লোকটি বেশ স্মার্ট, মোবাইল ফোনে কথা বলছেন আর হাত নাড়াচ্ছেন। “আহা ………..ভূষি কখন খাবে তাও জানো না ?” থেমে থাকে লোকটি। ডান কানে থাকা মোবাইল ফোন কানে ধরে বাম হাত দিয়ে। আর ডান হাত দিয়ে বোবা বধিরদের যে ভাবে আকার ইঙ্গিতে বোঝানো হয় সে রকম ভাবে হাত নাড়াতে থাকে।

অপর প্রান্ত থেকে উত্তর কি আসছে তা বোঝা যাচ্ছে না। লোকটি আবার বলছে,“ আহা ভূষি কেউ খাবারের পরে খায় না কি ? ” হেসে মুখটা কেমন জানি করে। অপর প্রান্ত থেকে তার সম্ভবত কঠিন জবাব আসছে। লোকটা আবার বলে, “হ্যা সবাই সব কিছু জানে না। হঁ্যা আমি তো জানিনা বলেই কমোডের পানি দিয়ে কুলি করেছি। এ কথা আর কত বার বলবে তুমি ?”

কিছুক্ষন থেমে থেকে বলে, “ শোনো আমিও কোনোদিন ভূষি খাই নাই, এটা হল সিম্পল লজিক । লজিক শোনো খাবারের আগে খেলে কি হবে ? খাবার তো আর বের হবে না। আগে ভূষিই বের হয়ে যাবে । তোমার কষা বাথরুম আর লুজ হবে না। এজন্য তোমাকে খাবারের পরে খেতে হবে। অর্থাৎ ভূষিরস্তরটা থাকবে সবার উপরে, তার নীচে থাকবে খাবারের স্তর। ভূষির ধর্ম কি ? তাড়াতাড়ি পেট থেকে বের হয়ে যাওয়া। সে বের হতে চাইবে, সে তো আর একা বের হতে পারবে না। তোমার কষা বাথরুম ডিঙিয়ে, সবকিছু নিয়ে বের হয়ে আসবে, সিম্পল জিনিস।” সাথে লোকটি, হাসি হাসি ভাব করে । অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে মুখটা বেশ শক্ত করে বলে,” ভূষি তোমার সব কিছু দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে হালুয়া বানিয়ে ছাড়বে, হা…লু…য়া।’’

নিপা আর এমা হাসতে থাকে। হাসির শব্দটা একটু জোরে হওয়াতে লোকটি তাদের দিকে তাকায়। নিপা ভেবেছিল লজ্জা পাবে লোকটি, তিনি লজ্জা না পেয়ে বেহায়ার মত হাসছেন। লোকটিকে হাসতে দেখে নিপা আর এমা হাসির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এবার মনে হয় লোকটি লজ্জা পায়। লোকটি তার ডান হাতটার দিকে তাকায় । নিপা আর এমা ডান হাতের দিকে তাকিয়েই হাসছে। কারণ লোকটা কথা বলার সময় তার ডান হাত ঝাড়ছিল, আর কথা বলছিল। ডান হাত দিয়ে এমনভাবে ইঙ্গিত করছিল যেন ভূষি আর কষা বাথরুম দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে বের হওয়ার পদ্ধতি।

নিপা মনে করেছিল লোকটি লজ্জা পেয়েছে। কিন্তু তার ধারনা ভুল। কারণ লোকটি তখন উচ্চস্বরে বলছে, “ আরে কত শক্ত হবে, ভূষি তুমি বেশি করে খাও। আমি বলছি ভূষি তোমার শক্ত কষা মলকে হোটেলের ডাউলের মত পাতলা করবে। নরম হবে না মানে, মলের বাপ নরম হবে। দাঁড়াও আমি আসছি।” বলেই লোকটি তার মোবাইল ফোনটি তার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকে।

নিপা আর এমা হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে একে অন্যের গায়ে। এমা হাসতে হাসতে বলে,“নিপা তোর বর কিন্তু এরকম হবে।” নিপা প্রাণ খুলে হাসছিল। এমার কথা শুনে তার হাসিটা থেমে যায়। চোখ বড় করে বলে, “ আমার বর যদি এরকম হয় তাহলে তোর বরের পেটে শক্ত কষা হবে, বলে থামে নিপা। আবার হাসতে হাসতে বলে,“ পাথরের মত শক্ত আর সুপার গ্লু -এর মত কষা ” দুজনে হাসতে থাকে। দুজনে হাসি থামিয়ে হাঁপাতে থাকে। নিপা একটু চিন্তা করে বলে, “দাঁড়া, দাঁড়া এখন কয়টা বাজে ?”
এমা বলে, “কেন ? টাইম দেয়া আছে ?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। ফেসবুকে চ্যাট করার আছে। সময় হয়ে গেছে ”
“বেশিক্ষণ কিন্তু দাঁড়াতে পারবো না।”
নিপা তার মোবাইলটা বাম হাতে নিয়ে বলে, “কথা বলিস না , দ্যাখ আমি
যা যা বলছি সত্য। তুই প্রমাণ পাবি।”
“ওমা তাই ?”
নিপা মাথা ঝুঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ।”
“সত্যিই সব বলে দেয় ?”
“হ্যাঁ রে বাবা”
তারা বসে পড়ে দুজনে, নিপা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে যায়। ম্যাসেঞ্জারে
ম্যাসেজ আসে, “কেমন আছো”
নিপা : ভালো, তুমি ?
: ভালো, তোমাকে দারুণ লাগছে।
: ওমা তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ ?
: হু ।
এমাও ম্যাসেজ গুলো পড়ছে। নিপা বলতো , তুই কি জামা পরে আছিস ?

।।
নিপা , ম্যাসেজ দেয়- বলতো আমি কি জামা পরে আছি
: কালো, লাল ও সাদা প্রিন্টের জামা, আজ বোরখা পড়নি, মাথায় হিজাবও নাই, চোখে কাজল দিয়েছো।
: আচ্ছা বলতো আমার সাথে কে আছে ?
: জানি না। আমি শুধু তোমাকে জানি। তোমার সম্পর্কেই বলতে পারব।
: কেন বলতে পারবে না ?
: কারন শুধু তোমাকেই ভালবাসি। এমা অবাক হয়ে যায় ।
এমা নিপাকে বলে, “আজ ফজরের নামাজ পড়েছিস ?”
নিপা : না।।
এমা : তাহলে এটাও জিজ্ঞাসা কর।
নিপা হাসতে হাসতে বলে, ওটাও বলে দেবে।
নিপা ম্যাসেজ দেয়,“ বলতো আমি আজ নামাজ পড়েছি কি না ?”
: নিপা তোমার আমার ভালবাসা নিয়ে সন্দেহ আছে তাই না ?
: কেন ?
: শুধু যাচাই করছো, শোনো যাচাই করে ভালবাসা হয় না। না তুমি নামাজ আজ পড়তে পারনি। তুমি ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেছো। নাস্তা করেছো শুধু একটা টোস্ট আর ডিম , আর এককাপ চা, কি ঠিক আছে ?
: হ্যা ।
: বাই, ব্যস্ত আছি।
: রাগ করলে ?
: না, একটু মন খারাপ, আবার রাতে কথা হবে। এখন ব্যস্ত ।
নিপা মনটা একটু খারাপ করে । আস্তে আস্তে বলে, “রাগ করেছে মনে হয়।”
এমা অবাক বিষ্ময়ে বলে, “এটা কি করে সম্ভব ?”
নিপা বলে,“আমিও তো তাই বলি।”
“আচ্ছা নিপা তোর পরিচিত কেউ না তো ?”
“আরে না। পরিচিত হলেও ফজরের নামাজের কথা বলবে কিভাবে ?
সকালের নাস্তার কথা বলবে কিভাবে ?”
“তাও ঠিক।” ঠোঁট উল্টিয়ে এমা বলে “অবিশ্বাস্য। তবে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আজ রাতে আমি তোর সাথে থাকব, ওকে যাচাই করব, সত্য হলে সত্য তা ছাড়া ধরা খাবে” এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে।
নিপা চোখের ইশারায় বলে “কিভাবে ?”
“সেটা রাতেই বুঝবি।” এমা নিপার হাত ধরে বলে, “ সত্যি করে বলতো, কতদিন ধরে ওর সাথে পরিচয় ? নামটা তো আজও বললি না।”
“ওর নাম ফনি” বলে থামে নিপা, চোখটা বন্ধ করে , মাথা দোলাতে থাকে, চোখ খুলে বলে, “প্রায় মাস ছয়েক হবে। বা তারও বেশি হবে।”
‘ও’ বলে এমা একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। “ আসলে সম্পর্ক গভীর হলে অবশ্য বোঝা যায়। ”
নিপা মাথা দুলিয়ে বলে, “তা ঠিক। কিন্তু … ” থেমে যায় নিপা ।
: কিন্তু কি ?
: কিন্তু ইসলামে এরকম কিছু তো আমি শুনি নাই। পড়ি নাই। এজন্য এটা আমার বিশ্বাস হয় না। ”
: কি রকম ?
: বিয়ের আগে একজন ছেলে বা একজন মেয়ের সম্পর্ক গভীর হওয়ার কোন বৈধ কাহিনী বা উদাহরণ নাই। ”
: নাই বলে হতে পারে না ?
নিপা চোখ বন্ধ করে মুখটা গম্ভীর করে বলে, “বলতে পারবো না।”
“আচ্ছা এমা তোকে কি ও দেখেছে ?”
“হ্যা। বলে প্রতিদিনই দেখি।” থামে নিপা । চোখ বড় বড় করে বলে,
“জানিস ?”
“কী”
“একদিন ………”
“কি ?”
“তুই তো জানিস আমি টিপ দেই না। একদিন গোসল করে টিপ দিলাম। শাড়ী পরলাম। সেদিন ওর প্রথম মেসেজ ছিল। টিপ কেন দিলাম জানি না।”
“বলিস কি ?”
”হ্যাঁ শুধু তাই না, টিপটা না আমার কপাল থেকে পড়ে গেল। সেটাও না ও বলে দিয়েছিল !”
“ওমা বলিস কি ? আমার কেমন জানি লাগছে রে নিপা” থেমে গম্ভীর হয় এমা।
”লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ ……… আচ্ছা তুই কি বুঝতে পারিস ?”
“আরে না। আমি কিছুই বুঝতে পারি না ?”
নিপা মুখটা গম্ভীর করে। আনমনা হয়ে যায়। মাথা দুলিয়ে বোঝাতে চায় ভালবাসে। আস্তে করে বলে “প্রচন্ড। প্রচন্ড ভালোবাসি। আস্তে আস্তে যে ভালবেসে ফেললাম বুঝতে পারলাম না। শুধু …….থামে নিপা। থেমে থাকে কিছুক্ষণ চোখবন্ধ করে, “ জানিস আমি ওকে দেখতে পাই । আমিও বুঝতে পারি। ওটাও মিলে যায়। আমি একদিন বললাম ওকে, ‘তুমি সিগারেট খেয়েছো’ সেটাও মিলে গেল। ফনি সিগারেট খায় না। সেদিন প্রথম সিগারেট খেয়েছে।”
এমা চোখ বড় বড় করে বলে, “ওমা এটা বলিস নি তো। তাকে তো বাস্তবে দেখিস নি।”
“হ্যা বাস্তবে দেখিনি। ছবিতে দেখেছি।”
“তুইও যা বলিস তা মিলে যায় ?”
“হ্যা” ফনি বলে সব মিলে যায়। এতেই ও অবাক।
এমা বেশ গম্ভীর হয়ে বলে, ” তোদের ভালবাসা অনেক গভীর। তুই এতো দিন বলিস নাই কেন ?
এমা নিপার দিকে তাকিয়ে বলে, “আর কে জানে ?”
“তুই আর মা।। ”
“তোর মা কি বলে ?”
“মা বলে ছেলেটির মন ভালো, পবিত্র।”
“ওমা তাই ? তোর মা তো আবার লেখিকা মানুষ। কবি ভালবাসা, প্রেম ভালমত বুঝতে পারে। তোর মায়ের লেখা প্রেমের গল্প গুলো খুব সুন্দর।”
“মা বলেছে কাউকে কিছু না বলতে। কোনো বান্ধবীকেও না।”
“কেন ?”
“তা জানি না। তবে একদিন বললো এসব বললে নাকি ভালবাসার গভীরতা নষ্ট হয়ে যায়।”
“তাও ঠিক। কাউকে কিছু বলিস না।”
“হুঁ”
“আচ্ছা ছেলেটার বাড়ি কোথায় ?”

: সীমান্তে।।
: মানে?
হাসে নিপা। হাসতে হাসতে বলে “বগুড়া ও নওগাঁর সীমান্তে” “মানে” চোখ বড় বড় করে এমা বলে,
“আরে শোন, বগুড়ার সান্তাহারে ঢাকা রোড নামে একটা জায়গা আছে এর পরই নওগাঁ জেলা, এখানে একটা গ্রাম আছে ধামকুড়ি, ঐ গ্রামেই বাড়ি।
“ও আচ্ছা।।”

নিপার মনটা হঠাৎ করেই কেন জানি খুব ভাল লাগছে। ফনির কথা তার বলতে খুব ভালো লাগে। এই তো সেদিন ফনি তাকে একটা মেসেজ দিল তুমি খুব সুন্দর। তারপর সে মাঝে মাঝেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দ্যাখে। সে নিয়মিত নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে, নিজের রুপ বা সৌন্দর্যের প্রতি একটু উদাসীন। কিন্তু ফনির এ কথাতে সে নিজেকে আরও সুন্দর করতে চায়। সে এমনিই ফর্সা। কিন্তু আরও ফর্সা হতে পারলে আরও ভালো। সামনে তার এইচ.এস.সি পরীক্ষা। বেশ উৎফুল্ল সহকারে বলে, “জানিস ওর বাবা না জানে”
এমা বলে, “তোদের বিষয় ?”
“হুঁ” মুখটা হঠাৎ করে গম্ভীর করে বলে নিপা, “জানিস আমি না কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি।”
অবাক চোখে বলে “কেমন ?”
“কেমন ওটা বোঝাতে পারব না” থামে নিপা। নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে রাখে। হঠাৎ করেই চোখ মেলে বলে, “কেমন যেন সারাক্ষণ ফনির কথা মনে হয়। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় ও কি করছে আমি বুঝতে পারি।”
নিপাকে থামিয়ে দিয়ে এমা বলে, বলতো এখন কি করছে। নিপা বলে “এখন সে সিগারেট খাচ্ছে, আমার মন বলছে ফনি এখনই ফেসবুকে ইন করবে।। ”
“আচ্ছা দেখি তোর কথা সত্যি হয় না কি ? তুই ফেসবুকে ইন কর।। ”
“আমার ইন করতে হবে না আমি ইন অবস্থাই আছি।। ”
নীরবতা তাদের মাঝে। মোবাইলের স্কীনে তাকিয়ে তারা দুজনে। নিপার মাঝে একটু টেনশন কাজ করছে। সে ভালবেসে ফেলেছে ফনিকে। তার কথা সত্য না হলে এমা হাসবে। বলবে তোর ভালবাসা দুর্বল। নিপা মাঝে মাঝে এমার দিক তাকিয়ে মোবাইলের ̄স্কীনের দিকে তাকাচ্ছে। নিপার চোখ মুখ ভারি হয়ে আসছে। কেঁদে দেবে সে। এমা বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে, “তুই এত আনইজি হচ্ছিস কেন ?”
“এখনও মেসেজ দিলো না ?”
“আহা, ও জানে তুই ওকে মেসেজ দিতে বলেছিস ?”
“হ্যা জানে।”
হাসে নিপা। কারন তার মোবাইলে স্কীনে ফনির মেসেজ চলে এসেছে।
এমা নড়েচড়ে বসে, তারও মুখটা হাসি হাসি ভাব। বলে,
“ওমা সত্যিই তো। তোর মনের কথা সত্য। ফনি বুঝতে পেরেছে।”
“ দাঁড়া, দাঁড়া, আগে একটু চ্যাট করে নেই।। ”
এমা চুপচাপ দেখতে থাকে।
নিপা মেসেজ দেয়, “একটু আগে কি তুমি সিগারেট খেয়েছ ?”
“হুম অনেক দিন পর। একটা মাত্র। তা তুমি জানলে কিভাবে ?”
“শুধু তুমিই বুঝতে পারো ?”
“না তুমিও পারো।”
এমা বলে, কিরে নিপা,“তোদের সম্পর্ক তো অনেক গভীর।”

“হুম, কাউকে বলিস না।”
“আচ্ছা। ”
নিপা মনোযোগ দিয়ে মেসেজ আদান প্রদান শুরু করে।
“ফনি।। ”
“বলো।। ”
“আমি তোমাকে দেখতে চাই”
“ছবি দ্যাখো !”
“ছবি না সরাসরি।”
“তোমার পরীক্ষার পর।। ”
“তোমার ফেসবুক একাউন্টে আর কোন বন্ধু নাই কেন ?”
“বন্ধু একজনই হয়, সেটা তুমি।। ”
“আমার ভাল লাগে না।। ”
“আমারও।। ”
“ফনি।। ”
“বলো।। ”
“আমার মা কে চেনো ?”
“হঁ্যা। লেখিকা। অনেক ভাল লেখেন।। ”
“ওমা তুমি জানো, চেনো ?”
“হঁ্যা, উনি আমার প্রিয় লেখিকা।”
“হুম, আমার মা।। ”
“জানি।। ”
“আমার বাবাকে চেনো ?”
“হঁ্যা। ওনার নিক নেম খোকা।”
“উনি কেমন ?”
“উনি ? না থাক, বলা ঠিক হবে না। তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে।”
”কেন ?”
“তোমার বাবার থেকে তোমার মা ভাল মানুষ। তাই না ?”
”হঁ্যা।। ”
“ আচ্ছা, রাতে। বাই ! ”
“দেখছিস বাই বলেই নাই হয়ে গেল !” একটু বির৩ি সহকারে বলে
নিপা।
………………………চলবে।

 

মোঃ কামরুল হাসান কল্লোল