ঢাকা ১১:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রযুক্তিই পারে

  • শামীম রাব্বি
  • আপডেট সময় ০৯:৫৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • ৫৪ বার পড়া হয়েছে

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার মেধার কারণে। শক্তির জন্য নয়। শক্তি দিয়েই যদি প্রকৃতিকে জয় করা যেতো, তবে পৃথিবী শাসন করতো বন্য পশুরা। হয়তো হাতি, বাঘ বা সিংহ ! অথবা ডাইনোসাররাই এখনও টিকে থাকতো ! কিন্তু তা হয়নি। বর্তমান মানব সভ্যতার ইতিহাস প্রায় ছয় হাজার (৬০০০) বছরের। আদিকাল থেকেই মানুষ তার মেধা দিয়ে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে আছে। মানুষ যে শুধু টিকেই আছে, তা নয়। বরং মানুষ প্রকৃতিরই শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করে প্রকৃতিকে জয় করেছে অনেকাংশেই।

সমস্যা হচ্ছে, পৃথিবীতে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। আর প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে। যেমন, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, এক যুগে (১২ বছর) বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ৩৩.৬৯ শতাংশ আর আবাদী জমি কমেছে ২২.০ শতাংশ। এখন ২০১৯ সাল। আরও প্রায় দুই যুগের ব্যবধান ! বর্তমানে ১৯৯৬ সালের চেয়ে জনসংখ্যা বেড়েছে আরও ৩৮.৩৩ শতাংশ। আবাদী জমি যে কমেছে কতটুকু, সে পরিসংখ্যানে নাই বা গেলাম আর ! শুধু এটুকুই বোঝাতে চাই যে, জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, ঠিক তার সাথে পাল্লা দিয়ে জমি কমছে ! সহজ কথায় একদিকে মানুষের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে।

তাহলে তো দেশে এতদিন ভয়াবহ খাদ্য সংকট হবার কথা ছিল ! অনেক মানুষ না খেয়ে মরে যাবার কথা ছিল ! কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি। বরং এখন সরকার বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করে ! বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক বা না হোক, কালোবাজারী, মধ্যস্বত্বভোগী আর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রান্তিক কৃষকেরা যতোই ধানের ন্যায্য মূল্য না পাক, আর, চালের দাম যতই বৃদ্ধি পাক। বাংলাদেশে কিন্তু বিগত তিন যুগে সেই অর্থে কখনও ভয়াবহ খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ হয়নি। এটা কি করে সম্ভব ? এটা সম্ভব। কারণ, সীমিত ও দ্রুত কমতে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ আর অতি দ্রুত বাড়তে থাকা মানুষের অসীম চাহিদা – এই দু’এর মাঝখানের ব্যবধান পূরণ করছে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল।

উন্নত প্রযুক্তির কারণে, আগে এক বিঘা জমিতে যদি সাত (৭) মণ ধান ফলতো, এখন সেখানে বিশ (২০) মণ ধান ফলে ! আগে এক জমিতে বছরে একবার ফসল হলে এখন সেই একই জমিতে বছরে তিন (৩) বার ফসল হয়। মূলত প্রযুক্তিই মানুষের সমস্ত চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা – প্রতিটি ক্ষেত্রেই সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম চাহিদাকে পূরণের দায়িত্ব পালন করছে। সীমিত জমিতে অধিক মানুষের আবাসিক ও বানিজ্যিক চাহিদা পূরণের জন্য এসেছে High Rise Building – এর প্রযুক্তি।

জনসংখ্যা স্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে এসেছে CAD (Computer-Aided Design) I CAM (Computer-Aided Manufacturing) – এর প্রযু৩ি। জটিল রোগের সহজে ডায়াগনোসিস করার জন্য এসেছে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্টস্।

প্রতিটি পেশার মানুষের দ্রুত যোগাযোগ ও সহজে তথ্য শেয়ারিং এর জন্য এসেছে তথ্য প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক টেলিকমুনিকেশন।

খনিজ জ্বালানি – ডিজেল, পেট্রোল, খনিজ গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির উৎস ও মজুদ সীমিত। তাই প্রযুক্তির অবদানে, খনিজ জ্বালানির বিকল্প হিসেবে দিন দিন উন্নততর হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি (Renewable Energy) – সোলার, বায়োগ্যাস ও বায়োমাস ফুয়েল, উইন্ডমিল, হাইড্রোলিক প্ল্যান্ট ইত্যাদি। যার মজুদ আমরা প্রতিদিনই Renew করে নিতে পারবো। তাই এর উৎস সীমিত হলেও মজুদ অসীম।

মুলত সভ্যতার এমন কোনো শাখা নেই যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার নেই। প্রযুক্তিই সভ্যতা গড়ে। আর প্রযুক্তি গড়ে প্রকৌশলীরা। আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বলতেন,”একজন ডাক্তার ভুল করলে একজন রোগী মারা যেতে পারে। আর একজন প্রকৌশলী ভুল করলে একটি সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।” কাজেই সমাজে প্রকৌশলীদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমরা মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব। শুধু খেয়ে-পরে আরাম আয়েশে বেঁচে থাকা আর বংশবৃদ্ধি করে একসময় মরে যাবার জন্য নয় ! এটা তো পশু-পাখিরাও করে ! তাহলে, পশু-পাখি আর মানুষের তফাৎ রইল কি ? কেন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলো ? কারণ, মানুষের আছে সৃজনী শক্তি। আর প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজ নিজ সৃজনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজ, দেশ ও সভ্যতার জন্য এমন কিছু করা, যা তার মৃত্যুর পরও অন্য মানুষের কাজে আসবে।

এখন প্রযুক্তির যুগ। আজ প্রযুক্তিতে যে দেশ যত বেশি এগিয়ে সে দেশ পৃথিবীতে তত বেশি ধনী। আমরা পিছিয়ে আছি আমরা গরিব বলে নয় ! আমরা পিছিয়ে আছি কারণ, আমরা শুধু অন্যের প্রযুক্তি অতি উচ্চ মূল্যে কিনে ব্যবহার করি। কিন্তু, নিজেরা প্রযুক্তি অর্জনের চেষ্টা তেমন করি না। আর একারণেই আমরা গরিবও বটে !

আমাদের দেশে প্রায় ৭৯ শতাংশ উর্বর সমতল ভূমি। এখানে চাষাবাদ, রাস্তা-ঘাট, বিল্ডিং, স্থাপনা খুব সহজে কম পরিশ্রমে ও কম খরচে করা যায়। আমাদের কাছে এখনও আছে অতি উন্নতমানের নিজস্ব জ্বালানি ”প্রাকৃতিক গ্যাস”। আমাদের আছে অসংখ্য কর্মক্ষম মানুষ। আমাদের আছে সুদীর্ঘ সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্রবন্দর। আমরা চাইলেই খুব কম খরচে সমস্ত পৃথিবীর সাথে আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য করতে পারি অতি সহজেই।

আমরা যদি এ সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি, তবে খুব দ্রুতই আমরা মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরকে পেছনে ফেলে আরও সামনে এগিয়ে আরও উন্নত বিশ্বের তালিকায় স্থান করে নিতে পারবো। এটা আমরা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি। আমাদের দেশের মানুষের জীবন বাজি রেখে ভাগ্য অণ্বেষণে মানবেতরভাবে জাহাজ বা নৌকায় উত্তাল সাগরের বিভীষিকা পাড়ি দিয়ে বিদেশে যাবার কোনো দরকারই নেই ! বরং বিদেশীরাই আমাদের দেখে হিংসা করতে পারে। শুধু আমাদের দরকার নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের সঠিক নীতি নির্ধারণ করা। নিজস্ব প্রকৌশলীদের কাজে লাগিয়ে যুগোপযোগী প্রযুক্তি অর্জন করা। আমাদের প্রকৌশলীদের ব্যবহার করে সঠিক, যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন করা।

প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ও সর্বোচ্চ কার্যকরি ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারকে অবশ্যই আমাদের প্রকৌশলীদের কাজে লাগাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ব্যবহারিক শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আরও বেশী সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা মেধাবী – এ কথাটা সঠিক নয়। বরং বলা যেতে পারে, আামাদের দেশের মেধাবী সন্তানরাই কঠিন প্রতিযোগিতার দৌড়ে টিকে প্রকৌশলী হয়। তারা প্রকৌশল পড়ার কারণে মেধাবী হয় না। বরং মেধাটা সঙ্গে নিয়েই তারা প্রকৌশল পড়তে যায়। মেধা মানুষের মূল সম্পদ। তাই, আমাদের জাতির মেধাবী সন্তান – প্রকৌশলীদের উচিত নিজেরা সংগঠিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করা। আর এটা সম্ভব হলে আমাদের দেশ ও জাতি অতি দ্রুত সামনে এগিয়ে যাবে বহুদূর !

আমাদের দেশের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী, তরুণ প্রকৌশলী ও ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী অর্থাৎ যারা এখনও প্রকৌশল শিক্ষার্থী, সবাইকে সংগঠিত করার জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস, “Engineer’s Pen”, “প্রকৌশলীর কলম”। আমাদের দেশের সকল বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী, প্রবাসী প্রকৌশলী এবং যারা প্রকৌশলী না হয়েও প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন, সবার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং সৃজনশীল চিন্তা ও কাজের মিলনমেলা হবে আমাদের এই প্রকাশনা।

প্রকৌশলীরা কলম দিয়ে যা কিছুই সৃষ্টি করবেন, আমরা তাই ছাপবো এই “Engineer’s Pen”, প্রকৌশলীর কলম”-এ। হোক তা প্রযুক্তি নিয়ে লেখা বা গবেষণার প্রতিবেদন। বা গল্প, কবিতা, সাহিত্য, কৌতুক, ধাঁধা অথবা আর্ট। বিমান আবিষ্কারের বহু আগেই তো লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি তাঁর তুলির আঁচড়ে বিমানের মডেল এঁকেছিলেন। তাই একজন প্রকৌশলীকে আগে স্বপ্ন দেখা শিখতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্ন। মেধা ও শ্রমের সঠিক চর্চা করার স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন দেখা শেখায় শিল্প, সাহিত্য ও আর্ট। তাই আমাদের এই প্রকাশনায় প্রযুক্তির পাশাপাশি সাহিত্য ও আর্টও স্থান পাবে সমানভাবে। আমরা চাইবো বাংলাদেশে রেনেসাঁ ঘটাতে। পারি বা না পারি। স্বপ্ন তো দেখতে ও দেখাতেই পারি। কে জানে, আমাদের এই স্বপ্নই হয়তোবা একদিন সত্য হয়ে যাবে ! কোনো এক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাত ধরে !

শামীম রাব্বি

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রযুক্তিই পারে

আপডেট সময় ০৯:৫৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার মেধার কারণে। শক্তির জন্য নয়। শক্তি দিয়েই যদি প্রকৃতিকে জয় করা যেতো, তবে পৃথিবী শাসন করতো বন্য পশুরা। হয়তো হাতি, বাঘ বা সিংহ ! অথবা ডাইনোসাররাই এখনও টিকে থাকতো ! কিন্তু তা হয়নি। বর্তমান মানব সভ্যতার ইতিহাস প্রায় ছয় হাজার (৬০০০) বছরের। আদিকাল থেকেই মানুষ তার মেধা দিয়ে প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে আছে। মানুষ যে শুধু টিকেই আছে, তা নয়। বরং মানুষ প্রকৃতিরই শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করে প্রকৃতিকে জয় করেছে অনেকাংশেই।

সমস্যা হচ্ছে, পৃথিবীতে দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। আর প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে। যেমন, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত, এক যুগে (১২ বছর) বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ৩৩.৬৯ শতাংশ আর আবাদী জমি কমেছে ২২.০ শতাংশ। এখন ২০১৯ সাল। আরও প্রায় দুই যুগের ব্যবধান ! বর্তমানে ১৯৯৬ সালের চেয়ে জনসংখ্যা বেড়েছে আরও ৩৮.৩৩ শতাংশ। আবাদী জমি যে কমেছে কতটুকু, সে পরিসংখ্যানে নাই বা গেলাম আর ! শুধু এটুকুই বোঝাতে চাই যে, জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, ঠিক তার সাথে পাল্লা দিয়ে জমি কমছে ! সহজ কথায় একদিকে মানুষের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে।

তাহলে তো দেশে এতদিন ভয়াবহ খাদ্য সংকট হবার কথা ছিল ! অনেক মানুষ না খেয়ে মরে যাবার কথা ছিল ! কিন্তু, বাস্তবে তা হয়নি। বরং এখন সরকার বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করে ! বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক বা না হোক, কালোবাজারী, মধ্যস্বত্বভোগী আর সিন্ডিকেটের কারসাজিতে প্রান্তিক কৃষকেরা যতোই ধানের ন্যায্য মূল্য না পাক, আর, চালের দাম যতই বৃদ্ধি পাক। বাংলাদেশে কিন্তু বিগত তিন যুগে সেই অর্থে কখনও ভয়াবহ খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ হয়নি। এটা কি করে সম্ভব ? এটা সম্ভব। কারণ, সীমিত ও দ্রুত কমতে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ আর অতি দ্রুত বাড়তে থাকা মানুষের অসীম চাহিদা – এই দু’এর মাঝখানের ব্যবধান পূরণ করছে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল।

উন্নত প্রযুক্তির কারণে, আগে এক বিঘা জমিতে যদি সাত (৭) মণ ধান ফলতো, এখন সেখানে বিশ (২০) মণ ধান ফলে ! আগে এক জমিতে বছরে একবার ফসল হলে এখন সেই একই জমিতে বছরে তিন (৩) বার ফসল হয়। মূলত প্রযুক্তিই মানুষের সমস্ত চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা – প্রতিটি ক্ষেত্রেই সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম চাহিদাকে পূরণের দায়িত্ব পালন করছে। সীমিত জমিতে অধিক মানুষের আবাসিক ও বানিজ্যিক চাহিদা পূরণের জন্য এসেছে High Rise Building – এর প্রযুক্তি।

জনসংখ্যা স্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে এসেছে CAD (Computer-Aided Design) I CAM (Computer-Aided Manufacturing) – এর প্রযু৩ি। জটিল রোগের সহজে ডায়াগনোসিস করার জন্য এসেছে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্টস্।

প্রতিটি পেশার মানুষের দ্রুত যোগাযোগ ও সহজে তথ্য শেয়ারিং এর জন্য এসেছে তথ্য প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক টেলিকমুনিকেশন।

খনিজ জ্বালানি – ডিজেল, পেট্রোল, খনিজ গ্যাস, কয়লা ইত্যাদির উৎস ও মজুদ সীমিত। তাই প্রযুক্তির অবদানে, খনিজ জ্বালানির বিকল্প হিসেবে দিন দিন উন্নততর হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি (Renewable Energy) – সোলার, বায়োগ্যাস ও বায়োমাস ফুয়েল, উইন্ডমিল, হাইড্রোলিক প্ল্যান্ট ইত্যাদি। যার মজুদ আমরা প্রতিদিনই Renew করে নিতে পারবো। তাই এর উৎস সীমিত হলেও মজুদ অসীম।

মুলত সভ্যতার এমন কোনো শাখা নেই যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার নেই। প্রযুক্তিই সভ্যতা গড়ে। আর প্রযুক্তি গড়ে প্রকৌশলীরা। আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বলতেন,”একজন ডাক্তার ভুল করলে একজন রোগী মারা যেতে পারে। আর একজন প্রকৌশলী ভুল করলে একটি সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।” কাজেই সমাজে প্রকৌশলীদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমরা মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব। শুধু খেয়ে-পরে আরাম আয়েশে বেঁচে থাকা আর বংশবৃদ্ধি করে একসময় মরে যাবার জন্য নয় ! এটা তো পশু-পাখিরাও করে ! তাহলে, পশু-পাখি আর মানুষের তফাৎ রইল কি ? কেন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলো ? কারণ, মানুষের আছে সৃজনী শক্তি। আর প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজ নিজ সৃজনী শক্তি কাজে লাগিয়ে সমাজ, দেশ ও সভ্যতার জন্য এমন কিছু করা, যা তার মৃত্যুর পরও অন্য মানুষের কাজে আসবে।

এখন প্রযুক্তির যুগ। আজ প্রযুক্তিতে যে দেশ যত বেশি এগিয়ে সে দেশ পৃথিবীতে তত বেশি ধনী। আমরা পিছিয়ে আছি আমরা গরিব বলে নয় ! আমরা পিছিয়ে আছি কারণ, আমরা শুধু অন্যের প্রযুক্তি অতি উচ্চ মূল্যে কিনে ব্যবহার করি। কিন্তু, নিজেরা প্রযুক্তি অর্জনের চেষ্টা তেমন করি না। আর একারণেই আমরা গরিবও বটে !

আমাদের দেশে প্রায় ৭৯ শতাংশ উর্বর সমতল ভূমি। এখানে চাষাবাদ, রাস্তা-ঘাট, বিল্ডিং, স্থাপনা খুব সহজে কম পরিশ্রমে ও কম খরচে করা যায়। আমাদের কাছে এখনও আছে অতি উন্নতমানের নিজস্ব জ্বালানি ”প্রাকৃতিক গ্যাস”। আমাদের আছে অসংখ্য কর্মক্ষম মানুষ। আমাদের আছে সুদীর্ঘ সমুদ্র উপকূল ও সমুদ্রবন্দর। আমরা চাইলেই খুব কম খরচে সমস্ত পৃথিবীর সাথে আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য করতে পারি অতি সহজেই।

আমরা যদি এ সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারি, তবে খুব দ্রুতই আমরা মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরকে পেছনে ফেলে আরও সামনে এগিয়ে আরও উন্নত বিশ্বের তালিকায় স্থান করে নিতে পারবো। এটা আমরা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি। আমাদের দেশের মানুষের জীবন বাজি রেখে ভাগ্য অণ্বেষণে মানবেতরভাবে জাহাজ বা নৌকায় উত্তাল সাগরের বিভীষিকা পাড়ি দিয়ে বিদেশে যাবার কোনো দরকারই নেই ! বরং বিদেশীরাই আমাদের দেখে হিংসা করতে পারে। শুধু আমাদের দরকার নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের সঠিক নীতি নির্ধারণ করা। নিজস্ব প্রকৌশলীদের কাজে লাগিয়ে যুগোপযোগী প্রযুক্তি অর্জন করা। আমাদের প্রকৌশলীদের ব্যবহার করে সঠিক, যুগোপযোগী পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন করা।

প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ও সর্বোচ্চ কার্যকরি ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারকে অবশ্যই আমাদের প্রকৌশলীদের কাজে লাগাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ব্যবহারিক শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আরও বেশী সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা মেধাবী – এ কথাটা সঠিক নয়। বরং বলা যেতে পারে, আামাদের দেশের মেধাবী সন্তানরাই কঠিন প্রতিযোগিতার দৌড়ে টিকে প্রকৌশলী হয়। তারা প্রকৌশল পড়ার কারণে মেধাবী হয় না। বরং মেধাটা সঙ্গে নিয়েই তারা প্রকৌশল পড়তে যায়। মেধা মানুষের মূল সম্পদ। তাই, আমাদের জাতির মেধাবী সন্তান – প্রকৌশলীদের উচিত নিজেরা সংগঠিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করা। আর এটা সম্ভব হলে আমাদের দেশ ও জাতি অতি দ্রুত সামনে এগিয়ে যাবে বহুদূর !

আমাদের দেশের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী, তরুণ প্রকৌশলী ও ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী অর্থাৎ যারা এখনও প্রকৌশল শিক্ষার্থী, সবাইকে সংগঠিত করার জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস, “Engineer’s Pen”, “প্রকৌশলীর কলম”। আমাদের দেশের সকল বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী, প্রবাসী প্রকৌশলী এবং যারা প্রকৌশলী না হয়েও প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন, সবার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং সৃজনশীল চিন্তা ও কাজের মিলনমেলা হবে আমাদের এই প্রকাশনা।

প্রকৌশলীরা কলম দিয়ে যা কিছুই সৃষ্টি করবেন, আমরা তাই ছাপবো এই “Engineer’s Pen”, প্রকৌশলীর কলম”-এ। হোক তা প্রযুক্তি নিয়ে লেখা বা গবেষণার প্রতিবেদন। বা গল্প, কবিতা, সাহিত্য, কৌতুক, ধাঁধা অথবা আর্ট। বিমান আবিষ্কারের বহু আগেই তো লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি তাঁর তুলির আঁচড়ে বিমানের মডেল এঁকেছিলেন। তাই একজন প্রকৌশলীকে আগে স্বপ্ন দেখা শিখতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্ন। মেধা ও শ্রমের সঠিক চর্চা করার স্বপ্ন। আর এই স্বপ্ন দেখা শেখায় শিল্প, সাহিত্য ও আর্ট। তাই আমাদের এই প্রকাশনায় প্রযুক্তির পাশাপাশি সাহিত্য ও আর্টও স্থান পাবে সমানভাবে। আমরা চাইবো বাংলাদেশে রেনেসাঁ ঘটাতে। পারি বা না পারি। স্বপ্ন তো দেখতে ও দেখাতেই পারি। কে জানে, আমাদের এই স্বপ্নই হয়তোবা একদিন সত্য হয়ে যাবে ! কোনো এক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাত ধরে !

শামীম রাব্বি