ঢাকা ১১:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানি সরবরাহ সমস্যা ও জলবায়ুর প্রভাবে আগামীর ঢাকা

  • Mohammad Hafizur Rahman (Liton), PMP,P.Eng
  • আপডেট সময় ১১:৪৮:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

সারা পৃথিবীতে এ শতাব্দীর বড় চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম বিশুদ্ধ পানি। যদিও বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। তবুও এই সংকটের মুখোমুখি বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটিরও অধিক মানুষ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই শতাব্দীতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ।

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতি এক শহর। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বন্যা, আগুন, পরিবেশ দূষণসহ নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত এই শহর। এসবের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের সমস্যাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই নগরীর দুটি সিটি কর্পোরেশন ও নারায়ণগঞ্জের কিছু এলাকা মিলিয়ে ডিওয়াসা (DWASA) প্রায় ৩৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১২ মিলিয়নেরও অধিক গ্রাহককে প্রতিদিন পানি সরবরাহ করে থাকে। দৈনিক প্রায় ২৫০ কোটি লিটার হিসাবে বছরে এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৯১,২৫০ কোটি লিটার। আর ঢাকা ওয়াসার অধীনস্থ পুরো আয়তনে গড়ে ২,১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে যে পরিমাণ পানি পড়ে তার পরিমাণ প্রায় ৮০,০০০ কোটি লিটার অর্থাৎ ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক মোট সরবরাহকৃত পানির চেয়েও যা অনেকাংশেই কম। তাই ঢাকা শহর জুড়ে পানি সরবরাহের সমস্যা সারা বছরজুড়ে নিয়মিত এক সমস্যার নাম। এই সমস্যা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরেই জনগণ পানি সরবরাহের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করে আসছে- যা শুষ্ক মৌসুমে ভিন্নমাত্রার আকার ধারন করে।

এই সরবরাহে আমাদের রয়েছে নানাবিধ ঘাটতি। নানা রকম সমস্যা। এর প্রধানতমঃ কারণ হিসাবে বিবেচনা করা যায় পরিকল্পনার অভাব, প্রযুক্তির অভাব, অবকাঠামোর অভাব (পানিশোধন কেন্দ্র, সরবরাহ লাইন ও সংরক্ষন ব্যবস্থা),

ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের সমস্যা, নিকটস্থ নদীর পানি ব্যবহার করতে না পারা, অপরিকল্পিত সংযোজন ও ব্যবস্থাপনার অভাব। সেই সাথে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনেরও এক বিশাল প্রভাব। যতটুকু পানি সরবরাহ করা হয় সেই মোট সরবরাহকৃত পানির ৮২ শতাংশ আসে ভূ-গর্ভস্থ পানি থেকে ৫৭৭ টিরও বেশি গভীর নলকূপের মাধ্যমে। আর বাকি ১৮ শতাংশ পানি সরবরাহ করা হয় পানিশোধন কেন্দ্রের মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ-ও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় মানুষের জীবন যাত্রায় নেমে আসছে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। ফলশ্রুতিতে, বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ, নানাবিধ অসুখ-বিসুখ, অগ্নি সংযোগ, পরিবেশগত বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ প্রতিনিয়তই অনেক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রতি বছর যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুস্তরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে পূর্বের তুলনায় অধিক পরিমাণে পানি ধরে রাখছে ঊর্ধ্ব বায়ুর স্তর।

বেড়েই যাচ্ছে বাস্পীভবনের হার। অন্যদিকে, ভূপৃষ্ঠের পানিতেও পড়ছে পানির পরিমাণ-ও গুণগত মানের উল্টো প্রভাব। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কম বৃষ্টিপাত অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত আর বেশি বৃষ্টিপাত অঞ্চলে বেশী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ঢাকা শহরের মত উষ্ণ তাপমাত্রার শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং তা পানি সরবরাহের উপর প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণ আবহাওয়ায় মানুষের চাহিদার পরিমাণও বাড়ছে এবং সেই সাথে যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। পানির গুণগত মান কমে যাওয়ায় দূষণ বাড়ছে।পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ায় নানা প্রকার অসুখ-বিসুখসহ জীবনহানি হচ্ছে। উপরন্তু জলবায়ুর প্রভাব এর ফলে পানি সরবরাহের অবকাঠামোর উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির অপর নাম জীবনের পরিবর্তে মরণ হিসেবেই যেন বিবেচিত হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে জলবায়ু সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ ব্যবস্থার মোকাবেলা আশু প্রয়োজন।

এই সমস্যা সমাধানে কিছু উপায়ঃ
১. বর্তমান অবকাঠামো ও সক্ষমতা, চাহিদা এবং সরবরাহের সঠিক নিরূপন ও পরিকল্পনা গ্রহণ।
২. আইনগত সংশোধনসহ অবৈধ সংযোগকারী থেকে টাকা আদায়, সরকারের অনুদান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মোটা অংকের বাজেট নিরূপণ।

৩. ডিওয়াশার নেতৃত্বে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত পরিকল্পনা নিরূপণ।
৪. সরবরাহকৃত বর্তমান নেটওয়ার্কগুলোর কিছু উন্নয়ন, কিছু প্রতিস্থাপন ও কিছু নতুন সংযোজনের জন্য যোগ্য প্রকৌশলীদের মাধ্যমে পাইপ এর সঠিক সাইজ নিরূপণ।
৫. পানির চাহিদার বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনায় কিছু প্রক্রিয়া ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে যা চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। এসবের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি, সাউন্ড মিটারিং, ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের সীমিতকরণ, বিকল্প ব্যবস্থায় পানির চাহিদা পূরণ, আইনগত সংশোধন ও সরকারের ইন্সেন্টিভ প্রকল্প চালু করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সরকারকে ইন্সেন্টিভ হিসেবে প্রতিটি বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাত্র বা আধার বিনামূল্যে বিতরণ করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত চাহিদা নিরূপণ করে বিভিন্ন এলাকায় আরো নতুন নতুন পানি নিষ্কাশন কেন্দ্র স্থাপন।
৭. Fire Underwriters Survey (FUS) হিসাব পদ্ধতি বিবেচনা করে পানি সরবরাহের পাইপ নিরূপণ করে বিভিন্ন এলাকায় হাইড্রেনটসহ বাড়িগুলোতে সংযোজন।
৮. ভৌগোলিক উচ্চতা বিবেচনা করে গোটা শহরকে কতগুলো জোনে বিভক্ত করতে হবে। যাতে সব সময় পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত চাপ ও উচ্চতার বিরাজ করে এবং তা আগুন নিভানোর সময় ও থাকে।
৯. বিভিন্ন এলাকায় আরো নতুন পানির ট্যাংক ও স্টোরেজ তৈরি করে অভিকর্ষ শক্তি ও পাম্পের মাধ্যমে সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে হবে।
১০. বর্তমানে দূরবর্তী নদী থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো মানের অপরিশোধিত পানি এনে নিকটবর্তী নদীগুলোর পানির মানোন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়া।
১১. ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতা যেন বৃদ্ধি পায় তার জন্য অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ গ্রাউন্ডওয়াটার হাইড্রলজিস্ট ও হাইড্রোজিওলজিস্টদের সমন্বয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১২. পানির মূল্য ও গ্রাহকসেবা বৃদ্ধির সমন্বয় সাধন করতে হবে।
১৩. পানির জরুরী সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে হবে যার অন্তর্ভুক্ত হবে হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলো।
১৪. অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
১৫. জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন বান্ধব অবকাঠামো তৈরি করতে হবে আর সেই সাথে ভূগর্ভস্থ পানিসহ আশে পাশে নদীর পানি প্রবাহ এবং গুণগত মান বাড়াতে হবে।
১৬. বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশ পাশের নদীগুলোকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৭. পানি সরবরাহ লাইনে বিশেষ করে যেখানে সরবরাহ লাইন শেষ হয়েছে বা ডেড ইন্ড (Dead-end) গুলোতে নিয়মিত পানির গুণগতমান ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করতে হবে। সরবরাহ লাইন কোথাও যদি পানি প্রবাহ সচল না থেকে স্থির হয় এবং তা বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত হয় তখন পানির গুণগতমান কমে পানের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে সেই ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১৮. বিশেষজ্ঞ, স্টেকহোল্ডার এবং তৃণমূল মানুষদের মতামতের সমন্বয় করতে হবে।
১৯. সর্বোপরি পানি ব্যবহারে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা মূলক ব্যবস্থা এবং প্রচার বাড়াতে হবে।

পানি সরবরাহ সমস্যা প্রধান সমস্যা বিবেচনা করে, এই ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত, অবকাঠামোগত, পর্যাপ্ত অর্থসরবরাহ ও জনবলের উন্নয়ন সাধন করে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। তা না হলে সামগ্রিকভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

Mohammad Hafizur Rahman (Liton), PMP,P.Eng
PhD (Candidate, Canada), MASc.(Canada), M.Eng.(Netherlands)
Project Manager – D&C of Municipal Infrastructure
City of Kitchener, Canada
Kitchener, Canada
Cell: 1-613-261-2481
Email: hrahman22@yahoo.com

Source: ঢাকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা – উইকিপিডিয়া (wikipedia.org)

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পানি সরবরাহ সমস্যা ও জলবায়ুর প্রভাবে আগামীর ঢাকা

আপডেট সময় ১১:৪৮:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সারা পৃথিবীতে এ শতাব্দীর বড় চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম বিশুদ্ধ পানি। যদিও বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। তবুও এই সংকটের মুখোমুখি বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটিরও অধিক মানুষ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই শতাব্দীতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ।

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতি এক শহর। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, বন্যা, আগুন, পরিবেশ দূষণসহ নানা রকম সমস্যায় জর্জরিত এই শহর। এসবের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের সমস্যাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই নগরীর দুটি সিটি কর্পোরেশন ও নারায়ণগঞ্জের কিছু এলাকা মিলিয়ে ডিওয়াসা (DWASA) প্রায় ৩৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১২ মিলিয়নেরও অধিক গ্রাহককে প্রতিদিন পানি সরবরাহ করে থাকে। দৈনিক প্রায় ২৫০ কোটি লিটার হিসাবে বছরে এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৯১,২৫০ কোটি লিটার। আর ঢাকা ওয়াসার অধীনস্থ পুরো আয়তনে গড়ে ২,১৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে যে পরিমাণ পানি পড়ে তার পরিমাণ প্রায় ৮০,০০০ কোটি লিটার অর্থাৎ ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক মোট সরবরাহকৃত পানির চেয়েও যা অনেকাংশেই কম। তাই ঢাকা শহর জুড়ে পানি সরবরাহের সমস্যা সারা বছরজুড়ে নিয়মিত এক সমস্যার নাম। এই সমস্যা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরেই জনগণ পানি সরবরাহের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করে আসছে- যা শুষ্ক মৌসুমে ভিন্নমাত্রার আকার ধারন করে।

এই সরবরাহে আমাদের রয়েছে নানাবিধ ঘাটতি। নানা রকম সমস্যা। এর প্রধানতমঃ কারণ হিসাবে বিবেচনা করা যায় পরিকল্পনার অভাব, প্রযুক্তির অভাব, অবকাঠামোর অভাব (পানিশোধন কেন্দ্র, সরবরাহ লাইন ও সংরক্ষন ব্যবস্থা),

ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের সমস্যা, নিকটস্থ নদীর পানি ব্যবহার করতে না পারা, অপরিকল্পিত সংযোজন ও ব্যবস্থাপনার অভাব। সেই সাথে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনেরও এক বিশাল প্রভাব। যতটুকু পানি সরবরাহ করা হয় সেই মোট সরবরাহকৃত পানির ৮২ শতাংশ আসে ভূ-গর্ভস্থ পানি থেকে ৫৭৭ টিরও বেশি গভীর নলকূপের মাধ্যমে। আর বাকি ১৮ শতাংশ পানি সরবরাহ করা হয় পানিশোধন কেন্দ্রের মাধ্যমে। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ-ও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় মানুষের জীবন যাত্রায় নেমে আসছে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। ফলশ্রুতিতে, বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ, নানাবিধ অসুখ-বিসুখ, অগ্নি সংযোগ, পরিবেশগত বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ প্রতিনিয়তই অনেক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রতি বছর যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুস্তরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে পূর্বের তুলনায় অধিক পরিমাণে পানি ধরে রাখছে ঊর্ধ্ব বায়ুর স্তর।

বেড়েই যাচ্ছে বাস্পীভবনের হার। অন্যদিকে, ভূপৃষ্ঠের পানিতেও পড়ছে পানির পরিমাণ-ও গুণগত মানের উল্টো প্রভাব। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কম বৃষ্টিপাত অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত আর বেশি বৃষ্টিপাত অঞ্চলে বেশী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ঢাকা শহরের মত উষ্ণ তাপমাত্রার শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং তা পানি সরবরাহের উপর প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণ আবহাওয়ায় মানুষের চাহিদার পরিমাণও বাড়ছে এবং সেই সাথে যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। পানির গুণগত মান কমে যাওয়ায় দূষণ বাড়ছে।পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ায় নানা প্রকার অসুখ-বিসুখসহ জীবনহানি হচ্ছে। উপরন্তু জলবায়ুর প্রভাব এর ফলে পানি সরবরাহের অবকাঠামোর উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির অপর নাম জীবনের পরিবর্তে মরণ হিসেবেই যেন বিবেচিত হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে জলবায়ু সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ ব্যবস্থার মোকাবেলা আশু প্রয়োজন।

এই সমস্যা সমাধানে কিছু উপায়ঃ
১. বর্তমান অবকাঠামো ও সক্ষমতা, চাহিদা এবং সরবরাহের সঠিক নিরূপন ও পরিকল্পনা গ্রহণ।
২. আইনগত সংশোধনসহ অবৈধ সংযোগকারী থেকে টাকা আদায়, সরকারের অনুদান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মোটা অংকের বাজেট নিরূপণ।

৩. ডিওয়াশার নেতৃত্বে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত পরিকল্পনা নিরূপণ।
৪. সরবরাহকৃত বর্তমান নেটওয়ার্কগুলোর কিছু উন্নয়ন, কিছু প্রতিস্থাপন ও কিছু নতুন সংযোজনের জন্য যোগ্য প্রকৌশলীদের মাধ্যমে পাইপ এর সঠিক সাইজ নিরূপণ।
৫. পানির চাহিদার বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনায় কিছু প্রক্রিয়া ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে যা চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়। এসবের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি, সাউন্ড মিটারিং, ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের সীমিতকরণ, বিকল্প ব্যবস্থায় পানির চাহিদা পূরণ, আইনগত সংশোধন ও সরকারের ইন্সেন্টিভ প্রকল্প চালু করে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সরকারকে ইন্সেন্টিভ হিসেবে প্রতিটি বাড়িতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাত্র বা আধার বিনামূল্যে বিতরণ করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত চাহিদা নিরূপণ করে বিভিন্ন এলাকায় আরো নতুন নতুন পানি নিষ্কাশন কেন্দ্র স্থাপন।
৭. Fire Underwriters Survey (FUS) হিসাব পদ্ধতি বিবেচনা করে পানি সরবরাহের পাইপ নিরূপণ করে বিভিন্ন এলাকায় হাইড্রেনটসহ বাড়িগুলোতে সংযোজন।
৮. ভৌগোলিক উচ্চতা বিবেচনা করে গোটা শহরকে কতগুলো জোনে বিভক্ত করতে হবে। যাতে সব সময় পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত চাপ ও উচ্চতার বিরাজ করে এবং তা আগুন নিভানোর সময় ও থাকে।
৯. বিভিন্ন এলাকায় আরো নতুন পানির ট্যাংক ও স্টোরেজ তৈরি করে অভিকর্ষ শক্তি ও পাম্পের মাধ্যমে সরবরাহ ত্বরান্বিত করতে হবে।
১০. বর্তমানে দূরবর্তী নদী থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো মানের অপরিশোধিত পানি এনে নিকটবর্তী নদীগুলোর পানির মানোন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়া।
১১. ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতা যেন বৃদ্ধি পায় তার জন্য অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ গ্রাউন্ডওয়াটার হাইড্রলজিস্ট ও হাইড্রোজিওলজিস্টদের সমন্বয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১২. পানির মূল্য ও গ্রাহকসেবা বৃদ্ধির সমন্বয় সাধন করতে হবে।
১৩. পানির জরুরী সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে হবে যার অন্তর্ভুক্ত হবে হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলো।
১৪. অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
১৫. জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন বান্ধব অবকাঠামো তৈরি করতে হবে আর সেই সাথে ভূগর্ভস্থ পানিসহ আশে পাশে নদীর পানি প্রবাহ এবং গুণগত মান বাড়াতে হবে।
১৬. বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশ পাশের নদীগুলোকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৭. পানি সরবরাহ লাইনে বিশেষ করে যেখানে সরবরাহ লাইন শেষ হয়েছে বা ডেড ইন্ড (Dead-end) গুলোতে নিয়মিত পানির গুণগতমান ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করতে হবে। সরবরাহ লাইন কোথাও যদি পানি প্রবাহ সচল না থেকে স্থির হয় এবং তা বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত হয় তখন পানির গুণগতমান কমে পানের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে সেই ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১৮. বিশেষজ্ঞ, স্টেকহোল্ডার এবং তৃণমূল মানুষদের মতামতের সমন্বয় করতে হবে।
১৯. সর্বোপরি পানি ব্যবহারে জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা মূলক ব্যবস্থা এবং প্রচার বাড়াতে হবে।

পানি সরবরাহ সমস্যা প্রধান সমস্যা বিবেচনা করে, এই ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত, অবকাঠামোগত, পর্যাপ্ত অর্থসরবরাহ ও জনবলের উন্নয়ন সাধন করে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। তা না হলে সামগ্রিকভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

Mohammad Hafizur Rahman (Liton), PMP,P.Eng
PhD (Candidate, Canada), MASc.(Canada), M.Eng.(Netherlands)
Project Manager – D&C of Municipal Infrastructure
City of Kitchener, Canada
Kitchener, Canada
Cell: 1-613-261-2481
Email: hrahman22@yahoo.com

Source: ঢাকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা – উইকিপিডিয়া (wikipedia.org)